সিএইচটি টাইমস নিউজঃ-জনশক্তি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানি। বিশ্ব শ্রম বাজারে বাংলাদেশ অনেকটাই পরিচিত শ্রমিক প্রাপ্তির জন্য। শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে শুরুর দিকে বাংলাদেশ কোনো রকমে স্বাগতিক দেশের সব শর্ত মেনে নিয়ে মাথা গুনে লোক পাঠাত। বর্তমানে সেই অবস্থা টপকিয়ে বাংলাদেশ এখন আলোচকের মর্যাদায়। আলাপ-আলোচনার ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়েই বাংলাদেশ এখন জনশক্তি রপ্তানি করে। বর্তমানে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী তাঁদের মেধা, সততা, নিষ্ঠা, ও প্রতিভা দিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
মূলত ১৯৭৬ সালে মাত্র ছয় হাজার ৮৭ জন কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সূচনা হয়। সে বছর এ খাতে রেমিট্যান্স অর্জিত হয় মাত্র ২৩.৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রধান বাজার। আশির দশক থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়।
বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদশের প্রধান শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব, আরব আমিরাত, কাতারে এবং এশিয়ার মালয়েশিয়াতে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছিলো সেদেশের সরকার। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আবারো উক্ত দেশ গুলোতে জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ অ্যামেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত হয়েছে।
বর্তমানে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৩ ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা ১ হাজার ৭৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সেই হিসেবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মী মৃত্যুবরণ করলে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহণ ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে বর্তমানে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এই চেক প্রদান করা হয়। বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ থেকে দেওয়া হয় আর্থিক অনুদান। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ থেকে পাঠানো শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেকই অদক্ষ শ্রমিক। তবে চলতি বছর ৬০% দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে ১০০% দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করে চলেছে সরকার।
বর্তমানে সরকারি সেবায় ৭০টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪৮টি ট্রেডে দেশের তরুণ তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ‘রুপকল্প-২০২১’ সামনে রেখে ইতিমধ্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বিদেশগামী কর্মীদের কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটাবেজ সংরক্ষণ, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, অন-লাইন অভিযোগ ব্যবস্থাপনাসহ ভুয়া ভিসায় বিদেশগমন রোধ করতে প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত ‘স্মার্ট কার্ড’-এর মাধ্যমে বহির্গমণ ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে।
২০২০ সালের মধ্যে ২০ লক্ষের অধিক কর্মশক্তি বিদেশে প্রেরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রেমিট্যান্স ২৫বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।