খাদ্য নিরাপত্তা ও বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক স্টিল সাইলো। পতেঙ্গায় পুরাতন সাইলোর পাশে দেশের বৃহৎ এ স্টিল সাইলোটি (খোলা পণ্য সংরক্ষণাগার) নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ প্রকল্পের পতেঙ্গা সাইলোর পাশে ছয় একর জায়গার উন্নয়নসহ প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, আশুগঞ্জ, মহেশ্বরপাশা ও মধুপুরে আরও ৭টি সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। খাদ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বর্তমানে চট্টগ্রামে ৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুতের ব্যবস্থাসহ সারা দেশে মজুত ক্ষমতা ১৮ লাখ টন। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ন্যূনতম ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রাখতে হয়। স্টিল সাইলো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত হবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। শনিবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাইলো নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ও সাইলোর কর্মকর্তারা জানান, স্টিল সাইলো হচ্ছে খাদ্যশস্য মজুত ও সংরক্ষণের সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা। মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ নামের এ প্রকল্পে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টন ধারণ ক্ষমতার মোট আটটি স্টিল সাইলো নির্মিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পতেঙ্গা সাইলোর ধারণক্ষমতা হবে ১ লাখ ১৫ হাজার টন। ২০১৩ সালের শেষদিকে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১১ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন পায়।
২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনাসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত খাদ্যশস্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয় বলে চট্টগ্রামে বৃহৎ সাইলোটি নির্মিত হচ্ছে। এতে মোট ৯টি স্টিল সংরক্ষণাগার (বিন) থাকবে। প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন। প্রতিটি বিনের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থাকবে, যাতে খাদ্যশস্য মজুত, সংরক্ষণ এবং সরবরাহে গতিশীলতা থাকে। স্টিলের সাইলোগুলো তিন বছর খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে এবং গুণগত মানে কোনো পরিবর্তনও আসবে না। মজুতকৃত খাদ্যশস্যে কোনো গন্ধ হবে না, পচবে না ও পোকায় ধরবে না। সাইলোতে খাদ্যশস্যে ভিটামিন মেশানো থেকে শুরু করে মজুত, সংরক্ষণ ও বিলিবণ্টনের হিসাব অটোমেটিক মেশিনে নিয়ন্ত্রিত হবে। স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজ শেষ হলে খাদ্য মজুতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কোনো বছর বেশি উৎপাদিত হলে খাদ্যশস্যের দাম কমে যায়। প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফসল বিক্রি করে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারেন না। এ স্টিল সাইলো নির্মিত হলে খাদ্যশস্য বিক্রির জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবে না। টানা তিন বছর খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে বলে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেই সুরক্ষা নয়, সস্তায় বিক্রি করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকেও কৃষকদের রক্ষা করা যাবে। এদিকে বর্তমান সাইলোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার টন। আর নতুন স্টিল সাইলোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১৫ হাজার টন। দুইটি সাইলো মিলে ধারণক্ষমতা হবে ২ লাখ ৩৫ হাজার টন।
চট্টগ্রাম সাইলো অধীক্ষক মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ খান শিবলী যুগান্তরকে বলেন, স্টিল সাইলোতে খাদ্যশস্য মজুতের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। খাদ্যশস্যের মজুত থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ছয় লাখ টন খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে। স্টিল সাইলো নির্মাণ হলে চট্টগ্রামের খাদ্যশস্য মজুতের সক্ষমতা সাত লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।