বান্দরবান অফিসঃ-বিগত যেকোন সরকারের সময়ের চাইতে গত নয় বছরে বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ উৎপাদন করে রপ্তানি আয়ে বিশাল অবদান রাখছে এই খাত। রপ্তানি আয় বেড়ে ৪ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। এরইমধ্যে আমাদের দেশের ওষুধ সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ববাজারেও। বিশ্ববাজারে ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ শর্ত শিথিলের সুবিধাভোগী দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ হিসেবে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।
দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার কয়েক বছর ধরে বর্ষপণ্যের ঘোষণা দেয়। গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওষুধকে ২০১৮ সালের প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার বা ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার ফলে এই শিল্পের সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাই তৈরি পোশাক খাতের মতো ওষুধ শিল্পকেও এগিয়ে নিতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ওষুধের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে দেশেই কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি এপিআই পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করছে সরকার। এপিআই পার্ক পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না এবং পোষাক শিল্পের পর ওষুধ দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতেও সময় লাগবে না ।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানি করে নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে সম্ভাবনাময় উদীয়মান এই শিল্প খাত। ২০১৫ সালে ১০ কোটি ডলার (০.১ বিলিয়ন ডলার), ২০১৬ সালে ২৫ কোটি ডলার (০.২৫ বিলিয়ন ডলার) ও ২০১৭ সালে ৪০ কোটি ডলার (০.৪ বিলিয়ন ডলার) ঔষধ রপ্তানি হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ঔষধ রপ্তানি প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী ১০ বছরে ১৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে ঔষধ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ১৬.৫ শতাংশ যা ২০১৮ এর শেষে ২০ শতাংশে পৌঁছাবে। এ খাতে ২ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আরও ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। প্রতি বছর এ খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে।
জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ হাজার ৩৩৮টি ছোট-বড় ওষুধ উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো, স্কয়ার, গ্লাক্সো, রেনেটা, ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার, এসকেএফ, সেনডোজসহ বেশ কিছু কারখানায় আন্তর্জাতিকমানের ওষুধ উৎপাদিত হয়। দেশের উন্নতমানের ৫৪টিরও বেশি কোম্পানি আছে যারা অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৩০৩টি গ্রুপের ওষুধ রপ্তানি করে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৫০টি দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
বিশ্বে বর্তমানে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বাজার ধরা গেলে এ খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সরকার এই বিশাল বাজার ধরতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশের ওষুধের গুণগত মান ভালো এবং অন্য দেশের তুলনায় দাম কম সেহেতু আর অল্প কিছু বছরের মধ্যে সরকার এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।