প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অর্জিত সাফল্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি দেশের ৪৯২ টি উপজেলার সকল ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৮৭১৯১ টি গ্রামে সম্প্রসারণের জন্য ২য় সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করেন।
প্রকল্পটি এদেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে গৃহীত একটি মানবিক ও অনন্য উদ্যোগ হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দরিদ্র মানুষকে উচ্চ সুদের ক্ষুদ্রঋণের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় এ প্রকল্পে। সেজন্য একটি মডেল নেওয়া হয়- ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেল। এ মডেলের বিশেষত্ব হলো দরিদ্র মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সাথে সরকারি অনুদান প্রদান করে তাদের স্থায়ী তহবিলের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং ঐ তহবিলের মালিকানা স্থায়ীভাবে তাদের দেওয়া- যাতে তারা ঐ তহবিল আয় বর্ধক কাজে বিনিয়োগ করে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করতে পারে।
প্রকল্পের ২য় সংশোধিত মেয়াদকালে ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের আওতায় গঠিত মোট সমিতির সংখ্যা ৪০ হাজার ২ শত ১৬টি- যার সদস্য ২২ লাখ দরিদ্র পরিবার। তারা নিজেরা সঞ্চয় করেছেন ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এ সঞ্চয়ের বিপরীতে সরকার হতে অনুদান দেওয়া হয়েছে ৮ শত ৯০ কোটি টাকা। ৪০ হাজার ২ শত ১৬টি সমিতিকে ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিলের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২ শত ৩৪ কোটি টাকা। বর্তমানে এ অর্থ সুদে-আসলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩ শত ৯৪ কোটি টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ দরিদ্র মানুষদের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে স্থায়ীভাবে। আর স্থায়ীভাবে এ তহবিল ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠন করে দিয়েছেন। তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলে দরিদ্র মানুষের স্থায়ী তহবিল গঠনে একটি অনন্য উদ্যোগ। মানুষের মধ্যে প্রকল্প সম্পর্কে আস্থা বাড়াতে হবে। ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহারে সদস্যদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ঋণ বিতরণে কোনো অনিয়ম যেন না হয় সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ উদ্যোগের সুফল যাতে দরিদ্র মানুষেরা পায় সে জন্য দায়িত্ব সকলের। এ প্রকল্পের কর্মচারীদের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যাংকে স্থানান্তরের কাজ চলমান। প্রতি অর্থবছরের পুরো সময় নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। সকলে মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অন্তর্নিহিত যে চিন্তা ও চেতনা রয়েছে তা জনগণ ইতোমধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছে। সরকারের প্রতি- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের অসীম শ্রদ্ধা ও আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে গ্রামবাংলার দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে।