মো.আলী আশরাফ মোল্লা
বাংলাদেশ পুলিশের মেধাবী, চৌকস, দক্ষ কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব আনিসুল করীম শীপন হত্যাকাণ্ড আইয়ামে জাহিলিয়াত যুগকে ও হার মানিয়েছে। একদল বর্বর যুবক তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। গত ০৯ নভেম্বর দুপুরে রাজধানী ঢাকার আদাবরে অবস্থিত মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে তাকে হাসপাতালের কর্মচারীরা মিলে নৃশংস কায়দায় হত্যা করে। ভিডিও ফুটেছে দেখা গেছে একদল উশৃঙল যুবক তাকে টানা হিচড়ে করে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে তার গায়ের পর ৭/৮ জনের একটি দল ঝাপিয়ে পরে। তারা এলোপাতাড়ি ভাবে তাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং কনুই দিয়ে মারাত্মক ভাবে আঘাত করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু তারা নিশ্চিত করে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করি। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
একটি হাসপাতালে দিনে দুপুরে এইভাবে একজন সুস্থ মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলা কতটা জঘন্য এবং বর্বর তা ভাষাই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কতটা দুবৃত্তায়ন হলে এমন একটি জঘন্য কাজ করতে পারে। হাসপাতালের কোন কাগজ পত্র ছিল। তাদের কোন লাইসেন্স নাই। তারা অবৈধভাবে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিল। একটি দেশে কীভাবে লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল পরিচালিত হতে পারে? কীভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করে এবং একজন দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্মম,নিষ্টুর,নির্দয়ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে? বাংলাদেশের কোন মানুষ কে এইভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা কতটা ক্ষমতাবান হলে করতে পারে! তাদের শেকড় খুঁজে বের করতে হবে। তাদের খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অপরাধী যত বড়ই ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী হোক না কেন তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
আজ একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো অথচ সুশীল সমাজের কেউ বিন্দুমাত্র পতিক্রিয়া দেখান নাই! আজকে যদি অন্য কোন বাহিনীর কেউ হতো অথবা জনসাধারণ কেউ হতো অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কেউ হতো তাহলে প্রতিবাদের বন্যা বয়ে যেত। তাহলে আমাদের বেলায় কেন নেই সেই প্রতিক্রিয়া। কেন নেই প্রতিবাদের ভাষা! এই দ্বিচারিতা কেন? আমরা কেবল পুলিশ বলেই কি এই রকম দ্বিমুখী আচরণ! পুলিশ হলেও তো আমরা মানুষ। আপনাদের মতোই আমাদের রক্ত লাল। আপনাদের মতোই আমাদের পরিবার আছে। ছেলে মেয়ে আছে, বউ আছে, বাবা মা আছে। যেই অফিসার কে আজ নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো তারও ফুটফুটে একটি বাচ্ছা রয়েছে। সে কাকে বাবা বলে ডাকবে? তাকে লালন পালন কে করবে? তার প্রিয়তম স্ত্রী আজ স্বামীহারা হলো? আজ কেন কোন প্রতিবাদ নাই?
যাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো তিনি একজন বিসিএস কর্মকর্তা। তিনি ৩১ তম বিসিএসের একজন মেধাবী অফিসার। ৩১ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ১ম স্থান অর্জনকারী ব্যক্তি তিনি। তাকে হারিয়ে দেশ হারিয়েছে একজন সম্ভাবনাময়ী সেরা চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা কে। বউ হারিয়েছে তার প্রিয়তম স্বামীকে। বাবা মা হারিয়েছে তার সাত রাজার ধন প্রিয় সন্তানকে। তার সন্তান হারিয়েছে তার প্রিয়তম বাবাকে। যে আর কখনো বাবা ডাকতে পারবে না। এতো সব অধিকার যাদের কারণে হারিয়েছেন তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। চৌকস কর্মকর্তা আনিসুল করীমের হত্যাকারীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক দিতে হবে। যাতে এই বাংলায় কেউ আর এই দুঃসাহস দেখাতে না পারে। কোন মানুষকেই কেউ যেন হত্যা করতে না পারে।
লেখকঃ সাবেক সাধারণ সম্পাদক,
জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।