নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার নারায়ণগঞ্জের ডন চেম্বার এলাকার মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসাঁ ল্যাবে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ সময় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটির কোনো অনুমোদন দেখাতে পারেনি।ফলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরীর নেতৃত্বে হাসপাতালটিকে নগদ দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।অভিযানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে,মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসাঁ ল্যাবটি দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে চলছে।তবে হাসপাতালটি পলিচালনার কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়াও হাসপাতালটিতে ডিউটি ডাক্তার সব সময় উপস্থিত না থাকার সত্যতা পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে সকল বিষয় আমলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি তাদের তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।নির্দেশিত সময়ের মধ্যে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না দেখাতে পারলে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়।প্রসঙ্গত,টনসিলের রোগ নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) অপারেশনের জন্য নারায়ণগঞ্জের নবাব সলিমুল্লাহ রোডের ডনচেম্বার এলাকার মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসাঁ ল্যাবে ভর্তি হন রোজিনা আক্তার (৩০) নামে এক নারী।ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালটিতে রোগীর অস্ত্রোপচার হয়।এরপর রাত ১০টার কাছাকাছি সময়ে রোগীর শরীর খারাপ হতে থাকে।এ সময় রোগীর স্বজনরা বারবার হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও প্র্যাকটিস নার্সদের কাছে সাহায্য চাইলেও তারা এগিয়ে আসেননি বলে রোগীর একাধিক স্বজন অভিযোগ করেন।পরে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে রোজিনার নাকে মুখে রক্তক্ষরণের পর তার মৃত্যু হয়। গলায় টনসিলের সমস্যায় তার মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে বলে মৃত্যুসনদ দেয়।
রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হলে হাসপাতালের নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা নদী ও স্থানীয় ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুর বড় ভাই সাবেক কমিশনার মেহাব্বত আজাহার তাদের নিয়ে সমঝোতায় আসেন।এ সময় ওই হাসপাতালের একটি প্যাডে স্বাক্ষর নিয়ে চার লাখ টাকায় রোগীর স্বজনদের চাপে ফেলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
ঘটনার দিন দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী পরিবারকে নগদ একলাখ টাকা ও পরদিন বুধবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় বাকি তিন লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।এই টাকার অর্ধেক ডা.এম এ সবুর ও বাকি অর্ধেক মেডিস্টার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করেন বলে হাসপাতালটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান।লেনদেন শেষে হাসপাতালটির প্যাডে মরদেহ ময়নাতদন্ত করাবেন না ও কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না উল্লেখ করে মৃত রোজিনার স্বজনদের কাছে থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
সেই সময়ের কিছু রেকর্ডিং ও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে।ভিডিওতে দেখা গেছে- হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা নদী মৃতের স্বজনদের সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার প্রশাসনের লোকের অভাব নাই আর টাকা পয়সারও অভাব নাই,আমি প্রশাসনিকভাবে লড়ব। আমি নিজেও একজন সাংবাদিক,আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ।সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমার প্রশাসনে লোকের অভাব নাই।আপনারা যদি মামলায় যেয়ে টাকা খরচ করতে চান আমিও মামলায় যেয়ে টাকা খরচ করব,কোনো অসুবিধা নাই।পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে আমি পাব মাত্র তিন হাজার টাকা।অপারেশন থিয়োঁর চার্জ পনেরশ টাকা আর কেবিন ভাড়া পনেরশ টাকা। বাকি টাকা নিয়ে গেছে ডা.সবুর।আমি কেন একা পুরো টাকা দিব?’
ওই দিন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান হাসপাতালে তদন্তে আসেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।
এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন,কেউ অভিযোগ করেনি বলে থানায় মামলা করা হয়নি।
ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চার লাখ টাকায় রফাদফার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে ধন্যবাদ জনিয়ে ফোন রেখে দেন।এরপর বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।