বান্দরবান অফিসঃ-মোবাইল মেকানিক সৈকত হাসান।খিলগাঁওয়ের তাললতলা মার্কেটে ব্যবসায় করেন তিনি।সেখানে মোবাইল সারাতে আসে লাবনী আক্তার কনিকা। মোবাইল সারার সূত্র ধরেই দুইজনের মধ্যে পরিচয়। আর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ভালো লাগা যা পরে পরিণত হয় ভালোবাসায়।কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁধ সাধে সৈকতের বাবা জনশক্তি রফতানি ব্যবসায়ী শাহ আলম ভূঁইয়া (৬৫)।অব্যাহত বাধা সত্ত্বেও যখন কনিকার কাছ থেকে ছেলেকে ফেরাতে পারছিল না পরিবারের সদস্যরা।তখন ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন শাহ আলম।আর এ কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে পথের কাঁটা সরাতে ছেলের প্রেমিকা কনিকাই হত্যা করে শাহ আলমকে।শুধু তাই নয়,হত্যা করে লাশ গুমের জন্য একটি লাগেজে ভরে সিএনজি অটোরিকশায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ফেলে দেয়ার জন্য নিজেই রওনা হয়েছিলেন ওই তরুণী।কিন্তু পথে জ্যাম থাকায় পানি খাওয়ার কথা বলে লাশ গাড়িতে রেখেই সটকে পড়ে ওই তরুণী।এরপরের দিন শাহ আলমের বাসায় গিয়ে পরিবারকে মামলা করার পরামর্শও দেয় কনিকা।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,এ হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।তাদের ভাষ্য মতে,কনিকা ও তার দুই দুলাভাই মিলেই শ^াসরোধে হত্যা করে শাহ আলমকে।এরপর অন্য একজনকে দিয়ে বাজার থেকে ল্যাগেজ কিনে লাশ ভরে সিএনজিতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কনিকা।জানা গেছে,ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য একটি কনডম ও নারীর কালো বোরকার এক টুকরা ছেড়া অংশও ওই লাগেজের মধ্যে দিয়ে দেয় খুনিরা।পুলিশ এরই মধ্যে কনিকাকে তাদের হেফাজতে নিয়েছে।তবে তদন্তের স্বার্থে অন্যদের আটকের বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে,গত ৯ এপ্রিল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বনশ্রীর দিক থেকে পূর্ব মাদারটেক গোড়ান প্রেজেক্টের সামনে এসে নামে এক তরুণী।পরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও যাওয়ার কথা বলে একটি সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া করে।এ সময় গাড়ির চালক মজিবর রহমানকে ওই তরুণী বলেন,ল্যাগেজে কাচের জিনিস সাবধানে ওঠাতে হবে।এ কারণে মজিবরসহ তিন চারজন সিএনজি চালক মিলে সেই ল্যাগেজ সিএনজিতে উঠায়।কিছু দূর গিয়ে যানজটে আটকে ওই যাত্রী পানি খাবে বলে সিএনজিতে লাগেজ রেখেই সটকে পড়ে।দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও তরুণী ফিরে না আসায় সন্দেহ হয় সিএনজি চালক মজিবরের।তখন তিনি ফিরে যান মাদারটেকে।বিষয়টি আশপাশের লোকজনদের জানালে তারা সবুজবাগ থানায় খবর দেয়।রাত ১২টায় লাশটি অজ্ঞাত পরিচয়ে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এরপর ওই রাতেই তার পরিচয় মেলে। পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করে।ওই দিন নিহতের জামাতা আশিক জানিয়ে ছিলেন স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন,মেয়ে নাসরিন জাহান ও দুই ছেলেকে নিয়ে উত্তর গোড়ানের ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন নিহত শাহ আলম।নিজের লাইসেন্স না থাকলেও বিদেশে লোক পাঠাতেন তিনি।গত ৮ এপ্রিল রোববার বিকেলে একটি ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।এরপর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।ফোন নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়।পরে জানতে পারেন পুলিশ ল্যাগেজ থেকে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।এরপর ওই রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তারা।জানা গেছে,নিহত শাহ আলমের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কদমতলা থানার শরণখোলায়।
জানা গেছে,হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে রহস্য জনক মনে হওয়ার পরপরই নিহতের ছেলে সৈকতকে আটক করেন গোয়েন্দারা।এরপর কনিকার এক বান্ধবীকে আটক করা হয়।তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কনিকার নতুন নম্বর পাওয়া যায় এরপর বেনাপোল থেকে কনিকাকে আটক করে পুলিশ।তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,গোড়ানের ৩১ নম্বর টিন শেডের বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় শাহ আলমকে।এতে কনিকাকে সহায়তা করে তার দূর সম্পর্কের দুলাভাই মনির ওরফে আলমগীরসহ দুজন।তারা তিনজন মিলে শাহ আলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরে।এরপর সেই লাশ গুম জন্য কনিকা নিজেই একটি সিএনজি ঠিক করে রওনা হয়।পথিমধ্যে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কনিকা।তারপর ওই রাতে এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন।সেখানে রাতে থেকে খুব ভোরে কাউকে কিছু না বলে যশোরের বেনাপোলে চলে যান।তার ভারতে পালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন,এ ঘটনায় কনিকা নামের এক মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।বিষয়টি নিয়ে দুই-তিন দিনের মধ্যেই বিস্তারিত জানানো হবে। অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন,হত্যাকাণ্ডে কয়জন জড়িত সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা কিছু কাজ এগিয়ে নিয়ে এসেছি। বাকি কাজ নিয়ে তদন্ত চলছে।জানা গেছে, কনিকা খিলগাঁও মডেল কলেজের অনার্সের ছাত্রী।সুন্দরী ওই তরুণী বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে নাচ করত।বস্তিতে বেড়ে উঠলেও তার পোশাক ও চাল চলন দেখে বোঝার উপায় ছিল না তার বেড়ে ওঠা বস্তিতে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার নাম ছিল সানিহা সারাহ।তবে সে সানিহা বা ইয়াসিকা নামেও পরিচিত ছিল।নিহতের পরিবার জানায়,সৈকত মোবাইল মেকানিক। খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটে ব্যবসা করে।সৈকতের বিয়ের পর ২০১১ সালে তার স্ত্রী এসএসসি পরীার জন্য পিত্রালয়ে চলে যান। এই সময়ে দোকানে মোবাইল সারাতে গিয়ে কনিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে।বিষয়টি পরিবারে কেউই জানত না।এর মধ্যে তাদের প্রেমে ভাঙনও ধরে। এরপর কনিকা ইটালি প্রবাসী ইভান নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করেন। সেখানেও কনিকার বনিবনা না হওয়ায় সম্পর্কের ফাটল ধরে। ২০১৬ সালের দিকে আবারো সৈকতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান কনিকা।পরের বছর ২০১৭ সালের শেষের দিকে সৈকতের পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং এবার সৈকতকে নিষেধ করে বসেন বাবা।কিন্তু বাবার কথা উপো করে কনিকার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায় সৈকত।মাঝখানে সৈকতের স্ত্রী অভিমান করে পিত্রালয়ে চলে যান এবং আবারো ফিরে আসেন।সৈকতের পরিবারের দাবি,সৈকত কনিকার সাথে যোগাযোগ না করলেই সে দোকানে চলে আসতো।এরপর তারা সৈকতকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে কনিকা শাহ আলমকে হত্যা করে।উৎসঃ-(নয়াদিগন্ত)
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.