অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সেলিম প্রধানের সঙ্গে আদালতে সাক্ষাৎ করেছেন তার রুশ স্ত্রী আনা প্রধান।এরপর তিনি আদালতে সেলিম প্রধানকে নির্দোষ দাবি করে তার মুক্তি চাইলেন।
আজ বুধবার ঢাকার ছয় নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানে অনুমতি নিয়ে তিনি সেলিম প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় আজ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সেজন্য তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
তিন দিন আগে ঢাকায় আসা আনা প্রধানও স্বামীর সঙ্গে সাক্ষ্যতের জন্য আদালতে আসেন। এরপর এজলাস কক্ষে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের অনুমতি চান আনা। আদালত অনুমতি দিলে কিছু সময় কথা বলেন তারা।
পরে আনা প্রধান বলেন, ‘আমি তিন দিন আগে এসেছি, এখন এদেশেই থাকব। আমাদের সন্তান আছে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাইছি। আইনের মধ্যে থেকে ন্যায়বিচার চাইছি।’
এদিকে রেজাউল করিম নামের একজন ব্যাংকার এই মামলায় আজ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মামলাটিতে ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় তার বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। চার্জশিটে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ হাজার টাকা থাইল্যান্ড ও ইউএসএতে পাচারের অভিযোগ আনা হয় সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত।
এর আগে সেলিম প্রধানকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে র্যাব-১। এরপর তার গুলশান-বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় নগদ ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
অভিযানে হরিণের চামড়াও পাওয়া যায় তার বাড়িতে। ওই দিনই সেলিম প্রধানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান।
পরদিন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মানিলন্ডারিং আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। এসব মামলায় তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এরপর তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। এ মামলায়ও তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
সেলিম প্রধানের জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারসে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ছাপা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট ও অফিসের নথিপত্রও ছাপানো হয়। তার এই প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপির একটি। ব্যাংকের পাওনা প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ঋণটি পুনঃ তফসিল করা হয়।