স্বাস্থ্য সেবায় বেশ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ফলশ্রুতিতে কমেছে শিশু মৃত্যু হার, উন্নতি হয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতার। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকারের নিতে হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তার মধ্যে নতুন মাত্রা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হলো মোবাইল ফোন স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম।
১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করলেই ওপারে বসে থাকা ডাক্তার দেবেন সমাধান। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়াও পাওয়া যাবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা। কিংবা রয়েছে হাসপাতালের যেকোনো অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগও। যা সরাসরি চলে যাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে (মোট ৪৮২টি হাসপাতাল) কর্মরত চিকিৎসকের কাছ থেকে এ সেবাটি নিতে পারবেন যে কেউ। এ জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিটি হাসপাতালে একটি করে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে।
এই সেবা চালুর ফলে গ্রাম বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত ধনী-গরীব সকলের জন্যই বিনামূল্যে সরকারী চিকিৎসকদের নিকট থেকে চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নিঝুম রাতে, জরুরী প্রয়োজনে বা পথের দুরত্বের কারণে চিকিৎসা পরামর্শ পেতে আর দেরী করার প্রয়োজন নেই। হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে ভুল বা অপচিকিৎসার ঝুঁকি নেবারও প্রয়োজন নেই। যে চিকিৎসা বাড়িতে বসেই সম্ভব তার জন্য হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। যে চিকিৎসা গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকেই সম্ভব তার জন্য উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার যে রোগটি জটিল এবং আশু চিকিৎসা প্রয়োজন তার জন্য অযথা এখানে সেখানে ঘুরাঘুরিতে সময় নষ্ট না করে বড় হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শটিও পাওয়া সম্ভব একটি মাত্র ফোন কল করেই। ব্যস্ত মানুষেরাও রোগের শুরুতেই পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের। এর ফলে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়।
এছাড়াও, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগে সারা দেশজুড়ে নেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ‘আপনজন’। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও রবির গ্রাহকরা প্রয়োজন মতো ১৬২২৭ নম্বরে ডায়াল করে স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ মা ও শিশুর যত্নের সঠিক তথ্যগুলোও পেয়ে থাকেন। শিশুর জন্মের পর মা ও শিশুর যত্ন শুরু হয় গর্ভকালীন সময়েই। গ্রামীণ মা ও তার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরামর্শ সেবার মাধ্যমে ‘আপনজন’ এসব তথ্যই দেয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গর্ভ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় ৮০ শতাংশ মৃত্যুই প্রতিরোধ যোগ্য এই বিষয়েও সচেতনতা দেয়া হয়।
এ কথা সত্য যে, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবন হয়ে উঠছে আরও সহজ। এর ফলে পরিবর্তন এনেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যেরও। মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে সব ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব প্রযুক্তি। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও। তারই প্রমাণ মোবাইল হেলথ সিস্টেম বা মোবাইলে স্বাস্থ্য সেবা।