গত জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সাথে বিএনপির নেতাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে জোটের বাইরের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে বিএনপি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামক নির্বাচনী জোট গঠন করলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে জোটের ওপর। ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা ড. কামালকে অনেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা বলে আখ্যায়িত করেন তখন। এরপর থেকেই মূলত ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্যাপক ভরাডুবির শিকার হয়েছে বিএনপি। প্রসঙ্গত এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচনী জোট গঠনের জের ধরে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় জেবেল রহমান গানি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ এবং খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। সেসময় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ন্যাপ চেয়ারম্যান গানি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা তা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যের নামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামক একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুঃখজনক হলেও সত্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপি ও তার নতুন বন্ধুরা যে সব ঘটনার অবতারণা করেছেন তা সত্যিই দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক।’
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জোটের বাকি শরিক দলগুলোর সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের জোর প্রচেষ্টা শুরু করে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠকে বসে বিএনপি। বৈঠকের শুরুতেই শরিক দলগুলোর নেতাদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপির নেতারা। ঐক্যফ্রন্ট নামক নির্বাচনী জোট গঠন করাকে ২০ দলীয় জোটের সাথে বেঈমানির শামিল বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া জোটের একাধিক নেতা জানান, ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হলেও এর বাস্তব ভিত্তি নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্টের গতিবিধি সেই সন্দেহের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের সময় আমাদের কোনো প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, ঐক্যফ্রন্টের তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যাদের কার্যত কোনো জনসমর্থন নেই। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন নির্বাচনকে বৈধতা দিতেই মূলত তারা বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সব কিছু ভুলে গিয়ে পুনরায় জোটকে কার্যকর করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানালে জোটের নেতারা ঐক্যফ্রন্টকে বিলুপ্ত ঘোষণা করার দাবি জানান। তবে তাদের এই দাবির বিপক্ষে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব এসময় দেশের বর্তমান অবস্থাকে চরম ক্রান্তিকাল বলে উল্লেখ করে জোটের শরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।