হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব ও জ¦ালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে। সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশনা পেলেই এর হোতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান শুরু হবে। হেফাজতে ইসলামের পেছনে বিরোধী রাজনৈতিক মদদ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল এমন অভিযোগ করে এলেও হেফাজতকে মোকাবিলা করা হবে প্রশাসনিকভাবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে আওয়ামী লীগ নেতারা হেফাজতের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনকে সহায়তা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা এ দফায় কর্মীদের নিবৃত রাখলেও ভবিষ্যতে যেকোনো তাণ্ডব মোকাবিলায় দলের নেতাকর্মীদের পাল্টা আঘাতের নির্দেশ দিয়েছে।
দলের নেতারা বলছেন, হেফাজতের তাণ্ডবের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ উসকানি থাকলেও হেফাজতের নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাই কেউ অপরাধ করলে প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণ করবে। কেউ রাজনীতি করতে চাইলে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেবে।

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, হেফাজতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সরকার সময় নিয়েছে। এর পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ঐতিহাসিক ১০ দিনের অনুষ্ঠানকে সফল করতেই সরকার ওই সময়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে যায়নি। এখন দেশের জনগণ হেফাজতের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। অ্যাকশনে না গিয়ে এ সময়ে সরকার একরকম প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব তাণ্ডবে যারা জড়িত ছিল তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে সরকার। ধর্মীয় আবরণে দুজন হেফাজত নেতার ‘কুৎসিত’ চরিত্রও প্রকাশ পেয়েছে। কঠোর হাতে তাদের দমনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। রাজধানীর পল্টন, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এ জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাদের আলাদা আলাদা মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে যারা জড়িত ছিল তাদের তালিকা করে প্রশাসনকে সহায়তা করতে দলের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হেফাজতের সহিংসতার ব্যাপারে সরকার কোনো ছাড় দেবে না। তারা যে কর্মকাণ্ড করেছে, সেটা মোকাবিলা করতে হলে শত শত মানুষকে গুলির মুখে ফেলতে হতো। কিন্তু সেটা সরকার করেনি, সরকার ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। গোটা জাতি দেখেছে এবং সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে যে, ধর্মান্ধরা কী করতে পারেÑ সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরও বলেন, যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত ছিল তাদের সবাইকে আইন অনুযায়ী কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তারা কোনোক্রমেই রেহাই পাবে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের বিচার হবে, ভবিষ্যতে তাণ্ডব করার জন্য তাদের আর ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। সাম্প্রতিক জ¦ালাও-পোড়াও সহিংসতার অপরাধ আইনিভাবে দমন করা হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে প্রশাসনকে সহায়তা করবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সরকারের সামনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছি। হেফাজতের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। দলের পক্ষ থেকে সরকারকে আরও কঠোর হতে বলেছি। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে আওয়ামী লীগ এসব স্বাধীনতাবিরোধীর মুখোমুখি হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হেফাজত বা কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এমন তাণ্ডব চালালে দলের নেতাকর্মীদের তার প্রতিঘাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘অপরাধ কেউ করলে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজনীতি কেউ করতে চাইলে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেবে। কিন্তু রাজনীতি করব না, রাজনৈতিক কর্মী না আমি, আবার রাজনীতির নাম করে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটনা ঘটাব, এসব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। মানুষের ভোগান্তি, জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা দেখছেন ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মার্চের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া হেফাজতের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। হতাহতের ঘটনা কমাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তাদের নেতাকর্মীদের নিবৃত রাখা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ, সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার রেশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। এরপরই হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। ২৬ থেকে ২৮ মার্চÑ এই কদিনের সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যুর হয়।