দেশে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তিরাও টিকা নিয়েছেন। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সাগ্রহে টিকা নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হাসপাতালপ্রধান। এমনকি টিকা নিতে দ্বিধা করেননি চিকিৎসক দম্পতি, প্রবীণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
গত দুদিনে পাঁচজন ভিআইপিসহ মোট ৫৬৭ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ‘কভিডশিল্ড’ নিয়েছেন।
এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে ৫৪১ জন ও টিকার উদ্বোধনী দিন গত বুধবার ২৬ জন টিকা নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার গণভবন থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভার্চুয়ালি টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রথম পাঁচজনকে টিকা নেওয়া দেখেন। পরে ওই হাসপাতালে আরও ২১ জন টিকা নেন। সর্বশেষ গতকাল যে ৫৪১ জন টিকা নেন, তাদের মধ্যে দুজন প্রতিমন্ত্রী, দুজন সচিব, একজন সাবেক মন্ত্রী, একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন অর্থনীতিবিদ ও একজন উপাচার্য রয়েছেন।
টিকাগ্রহণকারী কারও মধ্যে এখনো মারাত্মক বা জটিল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত দুদিনের টিকাগ্রহীতারাও এখন পর্যন্ত কোনো শারীরিক সমস্যার কথা বলেননি। এমনকি প্রথম দিন টিকা নেওয়ার পর গতকাল হাসপাতালে টিকা কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ করতে চলে এসেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তা। এসব টিকাগ্রহীতা বলেছেন, তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন, ন্যূনতম শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। এমনকি টিকা নেওয়ার পর তারা পুনরায় তাদের স্বাভাবিক কর্মকা- শুরু করেছেন।
তাদের কাছে এই টিকা বিভিন্ন সময় নেওয়া অন্য টিকাগুলোর মতোই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দেশের মানুষকে নির্দ্বিধায় করোনার টিকা নিতে আহ্বান জানান। তারা টিকাকে ঘিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ারও পরামর্শ দেন। তারা বলেন, রোগটি নিয়ন্ত্রণে এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখতেই সবার উচিত টিকা নেওয়া।
ভিআইপিসহ বিভিন্ন চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও বিভিন্ন বয়সী স্বাস্থ্যকর্মীদের এই টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে গত দুদিনে দেশে টিকাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের ইতিবাচক মনোভাবও লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন আড্ডায়, আলোচনায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন আগেও টিকা নিয়ে যে ধরনের সমালোচনা হতে দেখা গেছে, সেটার পরিমাণ বেশ কমেছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির ও পেশার মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
ভিআইপিদের টিকা গ্রহণের ঘটনাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বড় ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ায় সাধারণ মানুষ টিকা নিতে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাবে। মানুষের ভয় ভাঙবে। মানুষের মধ্যে যে একটা ভয় ছিল, সেটা চলে যাবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব ভালো হচ্ছে। সবার মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করবে। মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করছিল, সেটা চলে যাবে। সবাই উৎসাহের সঙ্গে টিকা নেবে।
এর আগে রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে তিনটি পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রতিটি ভ্যাকসিন কেন্দ্রে একটি অন্য রকম আমেজ চলে এসেছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনার ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভ্যাকসিন গ্রহীতা কোনো একজনেরও কোনো রকম অসুবিধা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করেছি। কোনো রকম অনুবিধাই হয়নি। কোনো ধরনের মিথ্যা গুজবে কান না দিতে তিনি এ সময় সবাইকে অনুরোধ করেন।
গত বুধবার ও গতকাল যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও এনসিডিসি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের খোঁজখবর রাখছি। তাদের ফোন করা হচ্ছে। তাদেরও বলা হয়েছে, কোনো অসুবিধা হলে যেখানে টিকা নিয়েছেন বা স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে জানাতে পারবেন। আমরা অসুস্থ হওয়ার কোনো ফোন পাইনি। কারও একটু ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব হয়েছে। তবে সে সংখ্যাটা খুবই কম। এ ধরনের সামান্য অসুবিধা সব টিকাতেই হয়।
যারা টিকা নিয়েছেন, তারা সাত দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের আমরা দেখতে চাই, কী অবস্থা হয়। মাত্র এক দিন হলো। দেরিতে কিছু হয় কি না, সেটাও দেখতে চাই। তবে এখন পর্যন্ত কারও সিরিয়াস রিঅ্যাকশন হয়নি। বড় কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়া বা নিউরোলজিক্যাল কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
পাঁচ হাসপাতালে টিকা নিলেন ৫৪১ জন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে ৫৪১ জন টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিআইপি ৮, চিকিৎসক ২৯৫, নার্স ৩২ ও অন্যান্য ২০৬ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৪৩১ ও নারী ১১০ জন।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে টিকা নেন ১৯৮ জন। তাদের মধ্যে ভিআইপি পাঁচ, চিকিৎসক ১৪২, নার্স চার ও অন্যান্য ৪৮ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ১৬৮ ও নারী ৩০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমেই টিকা নেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে মিন্টো রোডে অবস্থিত ল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে তার টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়েই টিকা কর্মসূচি শুরু হয়।
উপাচার্যের পরপরই টিকা নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জুলফিকার আহমেদ আমিন, লিভার (হেপাটোলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম জহুরুল হক সাচ্চু, সেবা তত্ত্বাবধায়ক সন্ধ্যা রানী সমাদ্দারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।
একজন ভিআইপিসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোট টিকা নিয়েছেন ১২০ জন। বাকিদের মধ্যে চিকিৎসক ৫৪, নার্স ৭ ও অন্যান্য ৫৭ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ১০০ ও নারী ২০ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ১০০ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ৫০, নার্স ১৩ ও অন্যান্য ৩৭ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ ও নারী ৪১ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৬৫ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ১২, নার্স পাঁচ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৪৮ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৫৫ ও নারী ১০ জন। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৫৮ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ৩৮, নার্স তিন ও অন্যান্য ১৭ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৪৯ ও নারী ৯ জন।
টিকা নেন ৮ ভিআইপি : স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি গতকাল রাজধানীর দুই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ছয় ভিআইপি। তাদের মধ্যে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে তথ্য সচিব খাজা মিয়া ও অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে ঢামেক হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারও টিকা নিয়েছেন।
টিকা নেওয়ার পর এসব বিশিষ্ট ব্যক্তি অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে দেশবাসীকে কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি সফল করার ও সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একটা শ্রেণি টিকা নিয়ে অপপ্রচার করছে। আমি টিকা নেওয়ার পরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অনেকের ভেতরে যে প্রশ্ন ছিল রাজনীতিবিদরা কেন টিকা নিচ্ছে না, সেই জায়গা থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিকা নেব।
টিকা নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে ধরনের অপপ্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ষড়যন্ত্রকারী এবং দেশবিরোধীরা করছে, তাতে কেউ যেন কান না দেয়। সে জন্য আমি মিডিয়ার সামনে টিকা নিয়েছি। টিকা নিরাপদ। সবাই নির্ভয়ে টিকা দিন।
টিকা নেওয়ার পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ভালো লাগছে। বিশেষ কিছু অনুভব করছি না। এটি অন্য সাধারণ টিকার মতোই। দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে টিকা নিতে এসেছিলাম। সাধারণ মানুষ বুঝুক, এটি একটি নিরাপদ টিকা। এ সময় তিনি টিকা নিয়ে গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সাধারণ মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া কোনো প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে ও সব সংশয় কাটিয়ে দেশবাসীর প্রতি করোনার টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, টিকা নেওয়াটা আমার সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব। মানুষ আমাকে দেখে আস্থা ও সাহস পাবে। মানুষের সংশয় ইতিমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। আমরা চাই, আমাদের দেখে মানুষ আস্থা পাক এবং টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হোক। এ সময় উপাচার্য জানান, টিকা নেওয়ার পর তিনি আগের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা অনুভব করছেন। কোনো ধরনের পাশর্^প্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না।
ভ্যাকসিন গ্রহণ শেষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করেছি। কোনো রকম অনুবিধাই হয়নি। কোনো ধরনের মিথ্যা গুজবে কান না দিতে তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন।
টিকাগ্রহীতারা সুস্থ আছেন : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল প্রথম টিকা নেন নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি। টিকা নেওয়ার পর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। অনেক উন্নত দেশের আগে বাংলাদেশ টিকা নিতে পেরেছে। আমার খুব ভালো লাগছে। আপনারা সবাই টিকা নেবেন। আমি আজ টিকা গ্রহণ করেছি, যাতে করে আমাদের অন্যান্য ডাক্তার, নার্স ও সাধারণ জনগণ উদ্বুদ্ধ হন। ’
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আমাদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম পাঁচজনের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমি টিকা গ্রহণ করেছি। আমি নিজকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আপনারাও টিকা গ্রহণ করুন। আমার ভ্যাকসিন নেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কেউ যেন ভয় না পান। টিকা নেওয়ায় আমার কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি এবং কোনো ব্যথা হয়নি। গত রাতে কোনো সমস্যা হয়নি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমি খুব সুস্থভাবে এখানে এসেছি। টিকা নিয়ে কোনো অপপ্রচারে আপনারা কান দেবেন না। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
গত বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম টিকা নেন ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। গতকাল দেশ রূপান্তরকে জানান, টিকা নিয়ে তিনি সুস্থ আছেন। এখন পর্যন্ত কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত কাজে হাসপাতালে গেছেন। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন ছুটি শেষে আবার নিয়মিত কাজ করবেন।
একই দিন উদ্বোধনের পরে বিভিন্ন শ্রেণির যে ২১ জন নাগরিক টিকা নেন, তাদের একজন বারডেম হাসপাতালের দন্ত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। তিনি গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, টিকা নিয়ে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। টিকা নিয়ে রাতে টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে জিমনেশিয়ামে গিয়েছি। চেম্বারে রোগী দেখেছি। আমি বেশ সুস্থ। কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ কারায় অনেকেই না করেছে। কারণ একদল গোষ্ঠী টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ফ্রন্টলাইন সৈনিক, সে জায়গা থেকে টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। কোনো ধরনের গুজবে বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে প্রত্যেকের টিকা নেওয়া জরুরি।
৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকা, প্রথম দিন একটা করে কেন্দ্রে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সরকার ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একসঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে চায়। সে পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রথম দু-তিন দিন ধীরগতিতে এগোনো হবে। পরে পুরোদমে শুরু হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও এনসিডিসি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেক্সিমকো সারা দেশে টিকা পৌঁছে দেবে। তারা সম্ভবত আগামীকাল (আজ শুক্রবার) থেকে পৌঁছানো শুরু করবে। প্রথম আসা ২০ লাখ টিকা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো কীভাবে বিতরণ হবে, সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এই টিকা আগামীকাল (আজ) থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাবে। এই টিকা দিয়েই উদ্বোধন ও গতকাল পাঁচ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি ৭ ফেব্রুয়ারি থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একসঙ্গে টিকাদান শুরু করা যাবে। তবে যেখানে যাবে, সেখানে যদি দুটি কেন্দ্র থাকে, তার মধ্যে একটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হবে। দুই-তিন দিন পর সব কেন্দ্রে শুরু হবে। শুরুটা দেখার জন্য ধীরগতির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে পুরোদমে শুরু হবে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.