একটি সেতুকে ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন আর্থিক খাত যেমন চাঙ্গা হচ্ছে, তেমনি আবাসন শিল্পের সামনে এক বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে পদ্মা সেতু। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে একেবারে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত আবাসন শিল্পের এক বিশাল হাব তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে। শুধু তাই নয়, পদ্মার ওপারেও মাদারীপুরের শিবচর এবং শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে একেবারে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত আবাসন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। আবাসন শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে মানুষের আয় বাড়তে শুরু করেছে, সামনে আরও বাড়বে। আর মানুষের আয় বাড়লে আবাসন শিল্পের সম্ভাবনাও তৈরি হয়। প্রাত্যহিক চাহিদা মিটিয়ে মানুষ নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মাথাগোজার ঠাঁই খোঁজে এবং এর জন্য বিনিয়োগ করে।
কেরানীগঞ্জ থেকে শুরু করে পদ্মার দুই পাড়ে আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ সময় যাচ্ছে এখন। এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন সময়ের আলোকে জানান, পদ্মা সেতুর কারণে বুড়িগঙ্গার ওপারে একেবারে সেতু পর্যন্ত আবাসন শিল্পের জন্য বিশাল বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এখন ল্যান্ড প্রকল্পের জন্য সম্ভাবনাটা আরও বেশি। এ সম্ভাবনা পদ্মার ওপার পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। আসলে পদ্মা সেতুর কারণে উভয় পারে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা হবে। সে সঙ্গে আবাসনও গড়ে উঠবে। সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে, মানুষের আয় বাড়বে। আয় বাড়লে আবাসন শিল্পের মার্কেট তৈরি হবে। যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা করছেন তাদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মার দুই পাড়ে বাড়িঘর হতে হয়তো আরও কয়েক বছর সময় লাগবে, কিন্তু ল্যান্ড প্রকল্পের জন্য এখন বড় সুযোগ। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে ওই এলাকার জমির দাম আরও বেড়ে যাবে। তাই কেরানীগঞ্জ থেকে মাওয়া পর্যন্ত ল্যান্ড প্রকল্পে বিনিয়োগের এখন শ্রেষ্ঠ সময়। আমাদের রিহ্যাবের অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান ওই এলাকার ল্যান্ড প্রজেক্টে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। তা ছাড়া সরকারের উদ্যোগে রাজউকের ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পও রয়েছে কেরানীগঞ্জে। সুতরাং সম্ভাবনার কোনো শেষ নেই পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে। তবে ক্রেতাদের উদ্দেশে আমার একটি মেসেজ আছে। সেটি হলো, ওই এলাকায় এখন স্বনামধন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক ভ‚ঁইফোড় প্রতিষ্ঠানও আবাসন প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে। সুতরাং জমি কেনার সময় অবশ্যই কোনো ভ‚ঁইফোড় বা বেনামি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্লট না কিনে প্রতিষ্ঠিত ও নামি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্লট কেনা ভালো। নতুবা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ভালোভাবে কাগজপত্র যাচাই করে তবেই জমি কিনতে হবে, নতুবা বিনিয়োগ করে পরে প্রতারিত হতে হবে।
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জ থেকে একেবারে মাওয়া পর্যন্ত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাদের আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঢাকা-মাওয়া রোড দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। এই রোডের একেবারে গা-ঘেঁষে রয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প। ‘দ্যা ভ্যালি’ নামের একটি ডুপ্লেক্স সিটি গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি। যার সেøাগানই হচ্ছে ‘লিভিং উইথ ন্যাচার’। রাস্তার ডানপাশে আছে বসুন্ধরার প্রকল্প ও রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্প। তা ছাড়া দুই পাশেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প রয়েছে।
মূলত পদ্মা সেতুর কল্যাণে কেরানীগঞ্জ উপজেলা ক্রমেই আধুনিক মডেল নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। আবাসন ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনার আভাস পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন অনেক ক্রেতা। ফলে তিলোত্তমা রাজধানী ঢাকার পাশে নতুন এক ঝলমলে শহর গড়ে ওঠার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এটি হবে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের পর দক্ষিণাঞ্চলের (বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে) অভাবনীয় উন্নয়ন। কেরানীগঞ্জ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি সম্ভাবনাময় আধুনিক উপজেলা। ইউনিয়নগুলো হচ্ছেÑ কোÐা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, আগানগর, জিনজিরা, কালিন্দী, রোহিতপুর, শাক্তা, তারানগর, কলাতিয়া ও হযরতপুর। এই ১২টি ইউনিয়নের কোÐা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, কালিন্দী, রোহিতপুর, কলাতিয়া ও হযরতপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন আবাসন প্রকল্প। সবচেয়ে বেশি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের কোÐা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, রোহিতপুর ও হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারিভাবে এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করার চিন্তা থেকেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসতি, স্থাপনা ও সুউচ্চ অট্টালিকা। এক সময়ের পতিত জমিগুলো এখন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। কেরানীগঞ্জ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলাসহ তৎসংলগ্ন এলাকার বহু মানুষ আমেরিকা, লন্ডন ও সৌদি আরবসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে কর্মরত। পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও পরিকল্পিত নগরীর অভাবে এতদিন তারা বিনিয়োগ করতে পারেননি। কিন্তু এখন পদ্মা সেতুর কারণে কেরানীগঞ্জে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় প্রবাসীদের মনেও জন্মভ‚মি নিয়ে আশার আলো উঁকি দিয়েছে। তারা সুন্দর ও আধুনিক পরিবেশে দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের জন্য মানসম্পন্ন বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। মূলত এই প্রবাসীরাই এসব আবাসন প্রকল্পের প্লট ও ফ্ল্যাটের অধিকাংশ ক্রেতা। অনেকে আবার সরাসরি আবাসন প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করছেন। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এখানে প্লট-ফ্ল্যাট কেনার প্রতি ঝুঁকছেন। এলাকাবাসীরা জানান, পদ্মা সেতুর জন্য কেবল সড়কের পাশেই নয়, মাওয়া পয়েন্টের আশপাশের জমির দামও দিন দিন বাড়ছে।
কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা আনাস মÐল জানান, কয়েক বছর আগেও যে জমি প্রতি কাঠা ২ বা ৩ লাখ টাকায়ও কিনতে চাইত না, সে জমির মূল্য এখন ১০-১৫ লাখ টাকা হয়ে গেছে। মূল রাস্তার পাশের জমির মূল্য তো আরও বেশি। জমির এত মূল্য বাড়ছে মূলত পদ্মা সেতুর কারণে। এতে করে আমরা স্থানীয়রা লাভবান হয়েছি, জমির ভালো মূল্য পেয়েছি। তার চেয়ে বড় কথা, পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের এলাকা উন্নত হচ্ছে, কেরানীগঞ্জ আধুনিক নগরীতে রূপ নিচ্ছে।
প্রকৃতির ছোঁয়ায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ডুপ্লেক্স সিটি : দেশের অন্যতম শীর্ষ আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করছে। ঢাকা শহরের একেবারে সন্নিকটে ঢাকা-মাওয়া রোডের একেবারে গা-ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ‘দ্যা ভ্যালি’ নামের একটি ডুপ্লেক্স সিটি। যার সেøাগানই হচ্ছে ‘লিভিং উইথ ন্যাচার’। অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে, গ্রামের বাড়ির উঠোনের মতো পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা, প্রজাপতির অভয়ারণ্য করার জন্য প্রচুর ফুলগাছ ও ঔষধি গাছসহ নানা প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবে এই ডুপ্লেক্স সিটিতে।
ডুপ্লেক্স সিটিতে বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। এখানে যারা ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনবেন তারা যাতে সম্পূর্ণ একটি গ্রামীণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পান তার জন্য সবরকমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত ফুলের বাগান থাকবে। এই বাগানে প্রজাপতি আকৃষ্ট করবে এমন ফুলের গাছই বেশি লাগানো হবে। এভাবে এখানে প্রজাপতির অভয়ারণ্য বানানো হবে। এ ছাড়া ঔষধি গাছের বাগানসহ অন্যান্য গাছের বাগানও থাকবে এখানে। এই ডুপ্লেক্স সিটির আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে বিদ্যুতের সংযোগ থাকবে মাটির নিচ দিয়ে। তা ছাড়া খেলার মাঠ, পার্ক, মসজিদ এবং হেলিপ্যাডেরও ব্যবস্থা থাকবে এখানে। এখানে ক্রেতারা ৩, ৪ এবং ৫ কাঠার জমিসহ ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনতে পারবেন।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.