নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাবিত ৩২২ নাম থেকে বাছাই করে ১৩ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি। সোমবার শেষ বৈঠকের পর এই কমিটি সেখান থেকে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া যত এগিয়ে আসছে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আগ্রহ-আলোচনা আরও বাড়ছে মানুষের। সর্বত্রই এখন একই প্রশ্ন- কে হচ্ছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আর কারাই বা থাকছেন কমিশনার (ইসি) হিসেবে।
সার্চ কমিটিতে যে ৩২২ জনের নাম এসেছে তার মধ্য থেকেই নতুন সিইসি এবং ইসি নিয়োগ পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু এর বাইরে থেকেও কেউ নিয়োগ পেতে পারেন।
এ-সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, সার্চ কমিটি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো নাম জমা দিতে পারেন কিংবা রাষ্ট্রপতি নিজেও অন্য কাউকে মনোনীত করতে পারেন। তবে কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রোববার সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন, এখতিয়ার থাকলেও প্রস্তাবিত নামের বাইরে কোনো নাম দেবেন না তারা।
এমন প্রেক্ষাপটে সিইসি এবং ইসি পদে বেশ কিছু নাম বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। এদের মধ্যে সিইসি পদে আলোচনায় আছেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব মুহাম্মদ সাদিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সাবেক আইনসচিব শহিদুল হক, সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ সফিউল আলম, সাবেক সচিব জাফর আহমেদ খান প্রমুখ।
এ ছাড়া সিইসি পদে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো নারী কেউ আসতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে তিনজনের নাম এসেছে তারা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাদেকা হালিম এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।
নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান, সাবেক স্বাস্থ্য ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালদার হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন তুলি, ইসির যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, শওকত আলী, সুলতানা কামাল, ড. বদিউল আলম মজুমদার, মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী, সাবেক সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রমুখ।
রীতি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার পদে বিচার বিভাগ থেকে একজন, সশস্ত্র বাহিনী থেকে একজন এবং একজন নারী থাকেন। সে হিসেবে সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং সাবেক বিচারপতিদের নাম আলোচনায় রয়েছে।
আলোচনায় থাকা পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক আইনসচিব শহিদুল হকের কাছে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে ফোন করলে তারা কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে সাবেক আইজিপি শহিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে কোনো দায়িত্ব দেয়া হলে সততা, নিষ্ঠা এবং সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে তা পালন করার চেষ্টা করব।’
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠনের পরদিন প্রথম বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম আহ্বান করা হয়। এতে সাড়া দিয়ে বিএনপি ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে ১০টি নাম চূড়ান্ত করে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে জানান, তারা ১০টি নামই জমা দিয়েছেন।
সর্বশেষ রোববার সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী মিটিংয়ে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।