দেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াচ্ছে কিছু কুচক্রী মহল। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই পদ্মা সেতুতে মাথা ও রক্ত, ছেলেধরা, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হচ্ছে, মসজিদে আগুন দেয়া হয়েছে, কাবা শরীফ ও শিব লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গুজব সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। শুধুমাত্র ছেলেধরা গুজবে প্রাণ হারিয়েছেন নিরপরাধ মানুষ।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব ঠেকাতে এবং এর কুপ্রভাব থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুজবের উৎপত্তি ও প্রচার রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে গুজবসমূহকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সমর্থ হয় সরকার।
চলমান গুজব নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ তৎপরতায় গুজবের উৎপত্তি ও প্রতিরোধ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহে সার্বক্ষণিক মনিটরিং/নজরদারী করে গুজব রটনাকারীদেরকে শনাক্ত করার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসায় গুজব সংক্রান্ত অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
জানা গেছে, গুজব রটনাকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্যে নিবিড় নজরদারী চালাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। এ বিষয়ে সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিটকে গুজব প্রতিরোধে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই পুলিশ ও র্যাব কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে শনাক্তকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুজব রটনাকারীদেরকে বিশেষ অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেফতার করেছে। এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
একইভাবে যেকোনো ধরণের গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টিমের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে আনসার ও ভিডিপি। এই বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়। এ বিষয়ে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কুসংস্কার থাকলে গুজব ছড়ায়। পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার জন্য গ্রাম, ইউনিয়ন পর্যায়ে আনসার বাহিনীর লিডারদের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এমনকি এই বাহিনীর সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুজবকারীদের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করছে বলেও জানা গেছে।
এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে যাতে কেউ গুজব সৃষ্টি ও ছড়াতে না পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সব স্তরের কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিপত্রে অসাধু মহল কর্তৃক শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সর্বসাধারণকে গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে গুজব রটনাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি, যেকোন গুজব কান না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছে সরকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুজব রোধ করে শান্তিপূর্ণ-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে সরকার।