স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নিয়ে যেমন খেদ রয়েছে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতে সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকে সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ বছর আগে যে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সে দেশটির অবস্থা দক্ষিণ এশিয়াতে এ সূচকে সবার নিচে।
আর ভারত চারটি সূচকের মধ্যে তিনটিতেই পেছনে পড়েছে বাংলাদেশের। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে ২০২০ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘ দিবসটি পালন শুরু করে ১৯৭৫ সাল থেকে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই নারী দিবস পালিত হয়। জার্মানির বামপন্থি পার্টির নেতা ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট ওম্যান কনফারেন্স’ বছরের একটি দিনকে সমাজে নারীর অবদানকে তুলে ধরার জন্য পালনের প্রস্তাব দেন। এরপরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এরপর অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নারী দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে নারীর অগ্রগতি কতটা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সামগ্রিকভাবে আগের চেয়ে অবস্থা বদলেছে। তবে এখানেই নারীর যাত্রা থেমে গেলে চলবে না বলে মনে করেন নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে নারীর অবস্থা আগের চেয়ে বদলেছে তা বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য চারটি প্রধান সূচকে দেখলেই বোঝা যায়। এগুলো হলো, নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য ও আয়ু এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ৫০তম অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদনে ১৫৩টি দেশের মধ্যে নারী-পুরুষের সমতার চিত্র দেখা হয়েছে।
বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন চারটি সূচকের অধীনে ১৪টি উপসূচক রয়েছে। এর মধ্যে চারটি উপসূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে। এই চারটি উপসূচক হলো, ছেলে ও মেয়েশিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি, মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়েদের সমতা, জন্মের সময় ছেলে ও মেয়েশিশুর সংখ্যাগত সমতা ও সরকারপ্রধান হিসেবে কত সময় ধরে একজন নারী রয়েছেন।
তবে এখনো নারী-পুরুষের সমতার চিত্র খারাপ। অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ নারী পুরুষের সমতায় পিছিয়ে আছে। নারীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ চাকরি পেতে, কর্মক্ষেত্রে ও রাজনীতিতে সম্মানজনক পদ পেতে এখনো বহু বেগ পেতে হয়। সেক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীর যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
ডব্লিউইএফ প্রতিবেদেন অনুযায়ী, লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বাংলাদেশ ৭২.৬০ পয়েন্ট পেয়ে বৈশ্বিক অবস্থান ৫০। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১ নম্বরে। বাংলাদেশের পরেই ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে নেপাল দক্ষিণ এশিয়াতে দুই ও বৈশ্বিক অবস্থানে ১০১ রয়েছে। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে শ্রীলঙ্কা ৩ নম্বরে অবস্থানে ও বৈশ্বিক অবস্থান ১০২ নম্বরে আছে। এরপরেই দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের অবস্থান ৪ নম্বরে আর ৬৮.৮ পয়েন্ট নিয়ে বৈশ্বিক অবস্থান আছে ১১২ নম্বরে। ৬৪.৬ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে ৫ নম্বরে আর বৈশ্বিক অবস্থানে ১২৩ নম্বরে আছে মালদ্বীপ। ভুটান ৬৩.৫ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে ৬ নম্বরে আর বৈশ্বিক অবস্থানে ১৩১ অবস্থানে। এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে বা ৭ নম্বরে আছে পাকিস্তান। দেশটি ৫৬.৪ পয়েন্ট নিয়ে বৈশ্বিক অবস্থানে ১৫১ নম্বরে।
তিন সূচকে ভারত থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ : ডব্লিউইএফ বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে ২০২০ নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য ও আয়ু এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নচারটি প্রধান সূচকে প্রতিটি দেশের লৈঙ্গিক বৈষম্য দেখা হয়। এই চার সূচকের মধ্যে তিনটিতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ভালো করেছে। গতবারের তুলনায় ভারত এবার সামগ্রিক সূচকেও খারাপ করেছে। গতবারে তাদের বৈশ্বিক সূচকে অবস্থান ছিল ১১৮ নম্বরে, এবার তা বেড়ে ১২২ দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষায় অংশগ্রহণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে ১২০ নম্বর। এ সূচকে ভারতের অবস্থান ১১২। নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ শীর্ষক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১। আর এ সূচকে ভারতের অবস্থান ১৪৯।