পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট চেয়ে আবেদন করেছেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রুমিন ফারহানা। আবেদনপত্রে তার ঢাকা শহরে কোথায়ও প্লট বা ফ্ল্যাট নেই দাবি করেছেন।
তবে তার বাবার রাজনৈতিক সহকর্মী ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন, রুমিন ফারহানার লালমাটিয়ায় ৩ কাঠার প্লট আছে।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় রুমিন ফারহানা নিজেই স্বীকার করেছেন, তার ১৮৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্ল্যাট মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রুমিন ফারহানার মোবাইল নম্বরে রোববার (২৫ আগস্ট) পৌনে ১২টার দিকে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (রুমিন ফারহানা) পারিবারিক কাজে তার নির্বাচনী এলাকায় আছেন। ঢাকায় ফিরলে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
জানতে চাইলে রুমিন ফারহানার বাবা ভাষা সৈনিক অলি আহাদের দল ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বাংলানিউজকে বলেন, রুমিন ফারহানার পিতা অলি আহাদের লালমাটিয়ায় বি ব্লকে একটি প্লট ছিল। সেটি নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর আমরা কয়েকজন মিলে রুমিনের নামে করে দিয়েছি। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডে যে ফ্ল্যাটে রুমিন ফারহানা থাকেন সেটাও তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। সেখানে তার ‘মা’ এর সঙ্গে রুমিন থাকেন।
‘যেহেতু তার আর কোনো ভাই-বোন নেই সেহেতু লালমাটিয়ার ৩ কাঠার প্লট ও এলিফ্যান্ট রোডের ফ্ল্যাট দুটোই তার। এছাড়া চট্টগ্রামেও তার প্লট রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সাইফুদ্দিন মনি বলেন, ছাত্রজীবনে রুমিন ফারহানা কোনো রাজনীতি করেননি। তার পিতার নির্দেশ ছিল পিতা যতদিন জীবিত থাকবেন মেয়ে রাজনীতি করবে না। পিতা তাকে বলে গেছেন, আমার মৃত্যুর পর চাইলে রাজনীতি করতে পারো। ২০১২ সালে তার পিতার মৃত্যুর পরই রুমিন বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। পরে ২০১৬ সালের কমিটিতে সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি তথা বিরোধীদলগুলো এই সংসদকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে আসছে। নির্বাচনের ফলাফলও প্রত্যাখ্যান করে তারা।
পরে আবার সংসদেও যোগ দেন এসব দল থেকে নির্বাচিত এমপিরা। সংসদে ৬টি আসন পাওয়ার কারণে সংরক্ষিত একটি নারী আসন পায় বিএনপি। বহু নাটকীয়তার পর দলের অনেক সিনিয়র নারী নেত্রীকে ডিঙিয়ে আসনটি বাগিয়ে নেন ভাষা সৈনিক অলি আহাদের কন্যা রুমিন ফারহানা।
পিতার হাতে গড়া দল ডেমোক্রেটিক লীগ না করে তিনি করেন বিএনপি। রাজনীতিতে বেশি দিন না হলেও টেলিভিশন টকশোর কারণে তিনি দেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত।
আর সরকারের বিরুদ্ধে মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে অনেকটা জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন। ফলে বিএনপির হাই কমান্ডের নেক নজর পড়ে তার ওপর। এতেই সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়ে যান।
গত ০৯ জুন জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে স্পিকারের কাছে শপথ নেন রুমিন ফারহানা। সংসদে যোগ দিয়েই টেলিভিশন টকশোর মতো সংসদের বক্তৃতায়ও একাদশ সংসদকে অবৈধ দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে দুই মাস না যেতেই গত ৩ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে একটি আবেদন করেছেন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে একটি ১০ কাঠার প্লট পাওয়ার জন্য।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওকালতি ছাড়া তার আর কোনো পেশা বা ব্যবসা নেই। ঢাকা শহরে তার কোনো জায়গা বা ফ্ল্যাটও নেই।
এই আবেদনের পরই মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।