জিয়া পরিবারের একনায়কতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে বিএনপি নেতারা অনেক দিন ধরেই সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হবার পর থেকেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা উচিত বলে উপলব্ধি করতে পারছিলেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা।
সূত্র বলছে, তারেক রহমানের নির্দেশ সরাসরি অমান্য করে ৫ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা একান্ত বৈঠকে বসেছিলেন। নীতি নির্ধারণী ফোরামের এসব নেতা আগামী দিনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট করেছেন বলেও জানা যায়।
এই বিষয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, ম্যাডাম জিয়া ও তারেক রহমানের দুর্নীতির যে দণ্ড হয়েছে এতে তাদের প্রতি দলের নেতাকর্মীদের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে কারাবন্দী খালেদা জিয়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর মুক্ত হবেন না বলেই দলের কর্মীরা মনে করেন। আবার তারেক রহমান ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় আর কখনো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না বলেও সিনিয়র নেতাদের মনে এমন ধারণা পোক্ত হয়েছে।
নীতি নির্ধারণী ফোরামের এই নেতা আরো বলেন, বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই তাদের আড়ালে রেখেই বিএনপির রাজনীতি করতে হবে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর কথা চিন্তা করেই খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বের সন্ধানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বিএনপি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে দলের শীর্ষ নেতা বানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এমন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অবগত হয়ে তাই সরকারের সাথে যে কোনো বৈঠক থেকে বিরত থাকার বিষয়ে তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও দলের সিনিয়র নেতারা তা অমান্য করেছেন। নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্তের কথা সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যা ভবিষ্যতে বিএনপির রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এ প্রসঙ্গে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলা চলে। তাই বিএনপির সিনিয়র নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক। বিএনপির উচিত এখন নতুন নেতা নির্বাচন করে স্বচ্ছ রাজনীতির পথে হাটার চেষ্টা করা।
উল্লেখ্য, তারেক রহমান সরকারের সাথে বৈঠকে বসতে নিষেধ করলেও দলটির সিনিয়র নেতারা এর বিরোধিতা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বসে আগামীতে বিএনপি যে ইতিবাচক রাজনীতি করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসে। ইতোমধ্যেই এনিয়ে দলটির অভ্যন্তরে নানা আলোচনা আর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে দলীয় একাধিক বৈঠকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে বিএনপির রাজনীতিতে।