শপথে আগ্রহী নির্বাচিতদের চাপে বেগম জিয়ার মুক্তিতে প্যারোল ও স্থায়ী জামিন নিয়ে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতিতে ঘোর-অমানিশা ভর করেছে। সংসদে যোগদানের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসার সাথে সাথে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি দলের নির্বাচিত এমপিদের কাছে মাইনর হয়ে গেছে। বরং জনগণের নাম ভাঙ্গিয়ে সংসদে বসতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন দলটির নির্বাচিত ৫ এমপি।
বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে উপায়হীনতা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন করে শপথের বিষয়টি বিএনপির জন্য ‘গোদের উপর বিষ ফোঁড়া’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য। দলটির দুজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বিএনপির রাজনৈতিক বিভ্রান্তি এবং সংকটের বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া গেছে।
এদিকে, বেগম জিয়ার মুক্তি ও শপথ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বে শেষপর্যন্ত বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে খ্যাত মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ২২ এপ্রিল দলীয় বৈঠকে বেগম জিয়ার মুক্তি ও শপথ নিয়ে চলমান আলোচনায় বেশ ঝামেলা হয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ চায় বেগম জিয়ার মুক্তি, কিন্তু অন্য একটি পক্ষ শপথের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে দলকে আল্টিমেটাম দিলে কোন্দল সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে দুটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে।
তিনি আরো বলেন, অচিরেই দুটি ইস্যুতে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিলে দলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মির্জা ফখরুল বাদে ৫ জন যদি বিদ্রোহী হয়ে শপথ নেয় তবে দলে বিপদের কোনো কূল-কিনারা থাকবে না। আমার মনে হয় বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি শপথ নিয়ে একটি স্থায়ী সমাধানে আসতে হবে। তবেই হয়তো রাজনৈতিক বিভ্রান্তি দূর হতে পারে বিএনপির।
বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, শপথ ও বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে দোটানায় পড়েছে বিএনপি। এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছে। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, বেগম জিয়াকে জেলে রেখে সংসদে যাওয়া বিএনপির জন্য সমীচীন হবে না।
তিনি আরো বলেন, গুঞ্জন শুনেছি- কিছু সিনিয়র নেতা দলের নির্বাচিতদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে শপথ নিশ্চিত করতে দলকে চাপ দিচ্ছেন। এসবের জন্যই বিএনপির রাজনীতিতে স্থবিরতা ভর করেছে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে। অচিরেই বিএনপিকে এসব বিভ্রান্তি দূর করে শক্ত অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। দলকে কারো কাছে নত করাটা ঠিক হবে না।