যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন পাবনা-১ (সাথিয়া ও বেড়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ আসনে জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের পছন্দের প্রার্থী সাথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. আব্দুল বাসেতকে বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। এর ফলে মোমেনের নির্বাচনী প্রচারণায় ভাটা পড়েছে। বলা হচ্ছে, এই আসনে হাতে-গোনা কিছু কর্মীকে ছাড়া কাউকেই পাচ্ছেন না তিনি। এতে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। আর তাই নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বেছে নিয়েছেন অনলাইন মাধ্যম।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তানী দোসরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ও গণহত্যা চালায়। এ অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধাপরাধী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর দ্বিতীয় পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে প্রার্থী করায় পাবনা-১ আসনের ভোটাররা ক্ষুব্ধ। তারা কিছুতেই একজন যুদ্ধাপরাধীর ছেলেকে এই আসনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায় না।
সূত্র বলছে, বিগত সময়ে জনসমর্থন হারিয়ে এমনিতেই রাজনীতির মাঠে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে অবস্থা ঝালাই করে নিতে ব্যাপক তোড়জোড় করে সাথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. আব্দুল বাসেতের মনোনয়ন বাতিল করান মোমেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনীত হয়েও তার পক্ষে জনসমর্থনে কর্মীর সংকটে পড়েছেন তিনি। এতে তিনি কিছুটা বিব্রত অবস্থায় পড়ে আছেন। ফলে যেহেতু নির্বাচনে এসেই পড়েছেন তাই অগত্যা তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে ব্যবহার করছেন অনলাইন। প্রচারণার কর্মী হারিয়ে নাজিবুর রহমান নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন শাখায়। বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে এ নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্ট শেয়ার করা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট গ্রুপও খুলেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডা. আব্দুল বাসেতের ঘনিষ্ঠ কর্মী বলেন, কেবল যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হওয়ায় পাবনা- ১ আসনটি আমরা হারাবো। মোমেন সাহেব কেবল জেদের বশবর্তী হয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা করলেন। যাই হোক, ২০ দল থেকে যেহেতু তাকে সর্বশেষ চূড়ান্ত দেয়া হয়েছে এতে আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু জামায়াতের পক্ষ থেকে তাকে আমরা সমর্থন করিনি, করবোও না।
এদিকে একই মত প্রকাশ করেছেন পাবনা-১ আসনের বিএনপি নেতারা-কর্মীরা। তারা বলছেন, ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে প্রার্থী মনোনীত করার বিষয়টি কর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। এতে তার পক্ষে কাজ করার মত কোন নেতাকেই পাওয়া যাচ্ছে না। একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তানের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে তারা ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ণ করতে রাজি নয় কর্মীরা।