মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষার কাজটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পাঁচ বছরের জন্য এই কাজ পেতে যাচ্ছে ‘কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। এ জন্য স্থাপন করা হবে ১২ লেনবিশিষ্ট ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি)। এই কোম্পানি রেলওয়ে টিকিট ডিজিটালাইজেশনের সাথেও জড়িত।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ভ্যাট, ট্যাক্সসহ মোট খরচ হবে ১০৫ কোটি ২২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই সভাটি দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বলা হয়েছে, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১২ লেনবিশিষ্ট ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, বিআরটিএ মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় কাজসহ সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে থাকে। এখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষার উদ্দেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) স্থাপন করা হবে। এই ভিআইসি পাঁচ বছর মেয়াদে পরিচালনা এবং মেয়াদ শেষে বিআরটিএর কাছে হস্তান্তর করবে।
এ শর্তে পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটিএ কর্তৃক ঢাকা মেট্রো-১, মিরপুর সার্কেল অফিসে ভিআইসি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে মিরপুরের বিআরটিএ অফিস কম্পাউন্ডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ইতোমধ্যে ওই অফিস সংলগ্ন বিআরটিসির ১২,০৭৫ বর্গফুট জায়গা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাধ্যমে বুঝে নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ভিআইসি স্থাপনের জন্য কনসালট্যান্সি সার্ভিস অর্থাৎ ভিআইসির ড্রইং, ডিজাইন এবং নির্মাণকাজের তদারকির জন্য বিআরটিএ গত ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেক্সিটিরাস কনসালট্যান্টস লিমিটেডের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২১ সালের ৩১ জুলাই শেষ হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে ১২ লেনবিশিষ্ট ভিআইসির ড্রইং, ডিজাইন দাখিল করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিআরটিএর অধীনে পাঁচ বছর মেয়াদে ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেল অফিসে ১২ লেনবিশিষ্ট ভিআইসি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, হার্ডওয়্যার ইত্যাদি সরবরাহ, স্থাপন, পরিচালনা, মেইনটেন্যান্স ও মেয়াদ শেষে হস্তান্তরের লক্ষ্যে ভেন্ডর/সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচনের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটি ইওআই, আরএফপি ও প্রাক্কলনটি প্রস্তুত করে।
সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। সেই বছরের ২৭ এপ্রিল কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ইওআই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। এই ইওআইর বিপরীতে ৯টি আবেদন পাওয়া যায়। বিআরটিএর প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক ইওআই মূল্যায়ন করা হয়। কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে এবং তা ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান কর্তৃক অনুমোদিতও হয়।
জানা গেছে, মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) দেয়া হয়। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানই আরএফপি দাখিল করে। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সংক্ষিপ্ত তালিকার চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় কারিগরি স্কোর অর্জন করে রেসপন্সিভ বিবেচিত হয়। এর মধ্যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড পায় ৮৯.১৪ স্কোর এবং অ্যাসোসিয়েশন ইউথ পার্টস ওয়ার্ল্ড এলএলসি, বেলটেক সিস্টেম অ্যান্ড সিনটেক সলিউশন লিমিটেড ৭৪.০২ স্কোর অর্জন করে। আরএফপিতে কারিগরি মূল্যায়নের যোগ্যতা অর্জনের ন্যূনতম স্কোর ৭০ নির্ধারণ করা হয়।
সূত্র জানায়, কারিগরি মূল্যায়নে রেসপন্সিভ বিবেচিত প্রতিষ্ঠান দু’টির আর্থিক প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত করা হয়। এতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড ভ্যাট, এআইটি এবং স্থানীয় অন্যান্য ট্যাক্স ছাড়া দর উল্লেখ করে ৮২ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৩৭৫ টাকা। অন্য দিকে অ্যাসোসিয়েশন ইউথ পার্টস ওয়ার্ল্ড এলএলসি, বেলটেক সিস্টেম অ্যান্ড সিনটেক সলিউশন লিমিটেড দর উল্লেখ করে ৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর্থিক মূল্যায়ন কমিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে সুপারিশ করে। এখন এই কোম্পানিকে মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষার কাজ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।