বিএনপির প্রতীকে নির্বাচিত এক সদস্য সুলতান মনসুরের পর এবার জোটের আরেক সদস্য মোকাব্বির খানও শপথ নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) তিনি শপথ নেন। বিএনপির নির্বাচিত ছয় সদস্যও ভেতরে ভেতরে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারায় বাড়ছে হতাশা। দলের হাইকমান্ডের গোঁড়ামি ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে শেষ পর্যন্ত সংসদ বর্জন করলে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বিএনপির নয়াপল্টন পার্টি অফিসের একটি সূত্র বলছে, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যের সবাই শপথ নিয়ে সংসদে গেলে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ নির্বাচিত ওই আটজন ছাড়া দুই জোটের অধিকাংশ নেতাই শপথ নেওয়ার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শপথ নেওয়ার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি আপত্তি রয়েছে ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর মধ্যেই। ফলে বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিলে ২০ দলীয় জোট এমনকি ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন অনেক নেতা। কারণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল নির্বাচন বর্জন করে এরইমধ্যে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি সংসদে যোগ দিলে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হবে। কারণ দল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। গুঞ্জন শুনছি, বিএনপি নেতারাও সংসদে যাওয়া নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত যদি প্রলোভনে পড়ে নেতারা সংসদে যান তবে সেটি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, যদিও দলীয় রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকরা পরামর্শ দিচ্ছেন। আমি যতদূর জানি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য সংসদে যাওয়ার বিপক্ষে। যারা সংসদে যেতে চাইছেন, বস্তুত তারা সরকারের দালালি করছেন এবং বিএনপিকে তারা শেষ করে দিতে চাইছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের মতে, বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যাবেন না। কৌশলগত কারণে আমরা সংসদ বর্জন করছি। একটি নতুন নির্বাচন আয়োজন না করতে পারলে সংসদে গিয়ে লাভ কী? যদিও দলের নির্বাচিতরা সংসদ ও রাজপথে থাকার ব্যাপারে কানাঘুষা করছেন। কিন্তু মনে রাখাতে হবে, দুই নৌকায় পা দিয়ে সফল হওয়া যায় না। বিএনপি লড়াই করেই দাবি আদায় করবে, তবুও এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে যাবে না। সুতরাং লোভ-লালসা ও প্রলোভন বিসর্জন দেয়ার জন্য আমি বিএনপির নির্বাচিতদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।