আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নব্য জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বেড়েই চলেছে। নানা হিসেব-নিকাশের পর তাদের সম্পর্ক কিছু স্বাভাবিকে আসলেও নির্বাচনে শরিকদের আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উত্তেজনা। জামায়াতকে ২৫ আসন ছাড়লেও ঐক্যফ্রন্টকে মাত্র ১৮টি আসন দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এরইমধ্যে অন্তত ২৫ আসনের জন্য বিএনপিকে আল্টিমেটামও দিয়েছেন ড. কামাল।
প্রসঙ্গত, জাতীয় ঐক্যের শুরু থেকে জোটে আসা নেতাদের প্রধান শর্ত ছিলো- জামায়াতকে ছাড়া জোট গঠন। সেখানে বিএনপি তাদের আশ্বস্ত করলেও ধীরে ধীরে জোটে জামায়াতের নীরব উপস্থিতি চাউর হতে থাকে। কিছুটা কৌশলগত ভুলের কারণেই বিএনপির সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে হয় ড. কামালসহ জোটের অন্য শরিক দলের নেতাদের। যদিও ঐক্যের শুরুতে শরিক দলের নেতা ড. কামাল, আ স ম আব্দুল রবসহ সবার মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু দিন যতো বেড়েছে, নির্বাচনী মাঠে কিছুটা শক্তি পেয়েছে বিএনপি- সেই সঙ্গে তাদের রূপও পরিবর্তন করতে শুরু করেছে দলটি। যা ঐক্যের সব নেতারাই এখন উপলব্ধি করছে। আসন বণ্টনে করতে এসে দুঃসময়ের কাণ্ডারি ঐক্যফ্রন্টকে জামায়াতের চেয়ে কম মূল্যায়ন করায় ঐক্যের নেতারা ত্যক্ত-বিরক্ত।
সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যের নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ার পর আসন বণ্টন নিয়ে সরব ছিলো ঐক্যের প্রত্যেক নেতা। এর অংশ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গণফোরাম নির্বাচনে ৭০ থেকে ৭৫টি আসন, জেএসডি ৩০ থেকে ৩৫টি আসন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২০টি আসন, নাগরিক ঐক্য অন্তত ২০টি আসন আশা করেছিলো। কিন্তু শরিক দলগুলোর মধ্যে সর্বমোট মাত্র ১৮ আসন চূড়ান্ত করায় কিছুটা ইমেজ সঙ্কটেও পড়েছে জাতীয় ঐক্যের এই নেতারা।
এ প্রসঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গঠনের শুরুতে আমাদের অবস্থান ছিলো জামায়াত বিরোধী। এখনো সেই অবস্থান আমরা ধরে রেখেছি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আন্তরিকতা যে এ পর্যায়ে পৌঁছাবে তা কল্পনা করিনি। এমনকি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে বিএনপি যে ঐক্যের নেতাদের গুরুত্বহীন হিসেবে দেখবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। তবে যুদ্ধাপরাধীদের দলের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের কোন বোঝাপড়া নেই, বোঝাপড়া বিএনপির সঙ্গে। নির্বাচনের প্রাক্কালে এসে তারা আসন নিয়ে দেশবাসীর সামনে আমাদের যেভাবে হেনস্তা করলো তার মাশুল তারা পাবে। তবে যদি আমাদের সর্বনিম্ন ২৫টি আসনে নিশ্চয়তা দেয় তবেই কেবল আমরা ঐক্য নিয়ে সামনে এগুবো।
সূত্র বলছে, ড. কামালের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন রব, মান্নাসহ জাতীয় ঐক্যের সব নেতারাই। তারা বলছেন, জামায়াতকে যদি ২৫ আসন দেয়া হয়, তবে ঐক্যের আসনও অন্তত ২৫টি হতে হবে। নইলে অপমানের জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। এমন পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এ আরাফাত রহমান বলেন, যদি কোনভাবে জাতীয় ঐক্যকে ২৫ আসন ছাড় দিতে রাজি হয় বিএনপি, তবে জামায়াতের দিক থেকে একইরকম বাধার সম্মুখীন হবে বিএনপি। আর জামায়াতের দিক থেকে এ ধরণের আপত্তি উঠলে তা বিএনপির জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে না। ফলে ঐক্যফ্রন্ট যদি ২৫ আসনে দম ধরে থাকে তবে এ জোটের ভাঙন অবধারিত। ঐক্যের নেতাদের বক্তব্যে আপাতত ভাঙনের সুরই বাজছে।