দুদক সূত্রে জানা যায়, খন্দকার মোশাররফ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে লুটপাট, দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে তার নিজের ও স্ত্রী বিলকিস আক্তারের যৌথ নামে আট লাখ চার হাজার ১৪২ ব্রিটিশ পাউন্ড পাচার করেন, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকার সমপরিমাণ। অবৈধ টাকার বৈধতা অর্জনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্বাস্থ্যখাতে সীমাহীন দুর্নীতি করে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সরবরাহের বাণিজ্যে কমিশন খেয়ে, অদক্ষ ও দলীয় ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে সরকারের সেবাখাতে সীমাহীন দুর্নীতি করেন খন্দকার মোশাররফ। এছাড়া নিজ নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি লোপাট করেন তিনি। দেশের স্বাস্থ্যখাতকে বিকলঙ্গ করে ফেলেন তিনি। বিদেশ সফরের নিজ ও স্ত্রীর নামে একাউন্ট খুলে কোটি কোটি লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া চিকিৎসকদের বদলি, পদোন্নতি, সরকারি চাকরি দেওয়া, বড় বড় টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়া, দলীয় কমিটি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেন তিনি। অবৈধভাবে অর্জন করা টাকা লুকিয়ে রাখতে এবং ভবিষ্যতে ব্যবহার করার জন্য তারেক রহমানকে বিশেষ কমিশন দিয়ে লন্ডনে পাঠান তিনি।
এই বিষয়ে দুদকের পরিচালক মো. নাসিম আনোয়ার বলেন, মানিলন্ডারিং এবং অবৈধপথে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর অর্থ-সম্পত্তির মালিক হন তিনি। তার এই আয়ের উৎস সম্পুন্নরূপে অবৈধ। সরকার ও জনগণের পয়সা চুরি করে নিজের ও স্ত্রী বিলকিস আক্তারের নামে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দুদকের গোপন তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আমরা দ্রুত আদালতের শরণাপন্ন হব। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আনার সব ধরনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। নির্দেশ পেলেই বিএনপির এই নেতাকে আটক করে তার অপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখিন করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের জিরো টলারেন্স নীতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মির্জা আব্বাস, মোসাদ্দেক আলী ফালু, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সিনিয়র নেতারা। এরই মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন মির্জা আব্বাস। একাধিকবার টেলিফোন করে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। আবদুল আউয়াল মিন্টুরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।