একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলন জনিত মামলায় দণ্ড পাওয়া থেকে শুরু করে ঋণখেলাপিসহ অসংখ্য অভিযোগে বিএনপি প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এমন বাস্তবতায় বিএনপি নেতারা নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রাথমিক ঘোষণা দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নৈতিক স্খলন জনিত কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে যদি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে তবে তা হবে তাদের রাজনৈতিক পরাজয়। বিএনপির আরেকবার ভেবে দেখা উচিৎ তারা এমন সিদ্ধান্ত নেবে কিনা।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট এবং তাদের শরিকদের অন্তত ২৬ নেতার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই মনোনয়ন ঋণখেলাপি, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের কারণে বাতিল হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র মতে, দুর্নীতিসহ একাধিক অপরাধের দায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার, গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটনের, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খোন্দকার আবু আশফাকের, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সাংসদ ফাহিমা হোসাইন জুবলীর, মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের তিন ইউনিয়ন) আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম খানের, বিএনপির আরেক প্রার্থী সিঙ্গাইর উপজেলা চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান খানের, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) আসনে বিএনপির প্রার্থী সরিষাবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল কবির তালুকদারের, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ সোলায়মান আলম ফকিরের এবং জেলা বিএনপির সদস্য মমতাজ হোসেনের, শরীয়তপুর–১ আসনে বিএনপির প্রার্থী সরদার নাসিরউদ্দিনসহ অনেকেরই মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়েছে।
সূত্র বলছে, এমন বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন আসনে যে প্রার্থী সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। এমনকি সংবিধান মোতাবেক এসব প্রার্থীদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপও নিতে পারছেন না তারা। কেননা, যে অপরাধের দায়ে নেতাদের মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়েছে তাকে ভুল প্রমাণ করার কোন পথ নেই। আর তাই নির্বাচন বর্জনের পথকেই প্রধান পথ হিসেবে দেখতে চাইছে বিএনপি।
যদিও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে সংবিধান মোতাবেক রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, কোন রাজনৈতিক দল যদি পরপর দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে তবে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে।
এদিকে বিএনপির নির্বাচন বর্জন এবং নিজেদের দেউলিয়াত্বের সুযোগ গ্রহণ করে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ আরাফাত রহমান বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা অন্য যেকোন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চাইবে তারা। কেননা, নির্বাচন বর্জন করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। ফলে এই সিদ্ধান্ত যদি বিএনপি নেয়-ই তবে রাষ্ট্র দখলের সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা করবে বলেই আমি মনে করি।