বান্দরবান অফিসঃ-আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত অর্থাৎ মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন কিছুটা ভিন্ন রকম। তাদের ভিতর বেশিরভাগই কাজের তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন এই শহরে। সকলেরই স্বপ্ন থাকে নিজের মাথার উপর এক টুকরো ছাদ। যেখানে দিন শেষে কাজ শেষ করে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে প্রিয়জনদের নিয়ে। বর্তমানে শহরের প্রেক্ষাপটে মাসিক আয়ের সিংহভাগই চলে যায় বাসাভাড়া বাবদ খরচে। ফলে মধ্যবিত্তের নিজের একটি ঠিকানার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্ন এবার বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হতে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ঠিকানা দেয়ার জন্য ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে রাজধানীর উত্তরা এলাকাটিকে। উত্তরায় ৮ হাজার ৭৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ১০৪টি ভবনে ফ্ল্যাটগুলো করা হবে। প্রতি ভবনে ফ্ল্যাট থাকবে ৮৪টি। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেন এবং এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫ হাজার ৯৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করার জন্য কারিগরি ও আর্থিকভাবে সহায়তা করবে মালয়েশিয়া। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে। ভবনগুলো করা হবে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লকে। একেকটি ভবন হবে বেইসমেন্টসহ ১৬ তলাবিশিষ্ট। এর মধ্যে ৫২টি ভবনে করা হবে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ৪৩৮টি ফ্ল্যাট। আর অন্য ৫২টি ভবনে করা হবে ৮৫০ বর্গফুট আয়তনের ৪ হাজার ৩৮৮টি ফ্ল্যাট। এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ পেয়েছে রেড টেন ইনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি।
রাজউকের দেয়া তথ্য মতে, যে ভবনগুলো করা হবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড বিল্ডিং সিস্টেমে (আইবিএস). ভবন তৈরিতে এটি একটি নতুন পদ্ধতি, যা মালয়েশিয়ায় জনপ্রিয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি ভবনের ছাদ নির্মাণে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগলেও আইবিএসে ছাদ তৈরি করতে লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম আইবিএস পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এই পদ্ধতিতে নির্মিত হওয়া ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থাও থাকবে, যাতে করে পানির কোনো সমস্যা না হয়। আইবিএসে ভবন তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতির মতো কলাম, বিম, ছাদ, দেয়াল, ছায়া-দেয়াল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় না, করা হয় অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো। প্রকল্পের আওতায় স্কুল, কলেজ ও কনভেনশন সেন্টার থাকবে। এ ছাড়া থাকবে খেলার মাঠ ও সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট।
বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রায়ই হয়রানি ও টাকা নিয়ে প্রতারণার স্বীকার হতে শোনা যায়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাতে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নিজস্ব এক টুকরো ঠিকানা ক্রয় করতে পারে এজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি প্রচলিত কথা ‘একদিন সব হবে’ এর কিছুটা হলেও পূর্ণ হবে। সরকার এরকম প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল শ্রেণী, পেশার মানুষ পাশে থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সকলে।