দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি বিএনপির চেয়াররপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পতন ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে তীব্র আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নামতে প্রস্তুত রয়েছে দলটি।
পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনও সময়ে বড় ধরনের আন্দোলনে নামার ইঙ্গিতও দেয়া হচ্ছে। দলীয় সূত্র এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।
নেতারা বলছেন, এই লক্ষ্যে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের জাগরণ তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চারদিকে সরকারের বিদায় ঘণ্টা শোনা যাচ্ছে। সভা সমাবেশ করতে আর তাদের অনুমতি নেয়া হবে না।’ তার সেই বক্তব্যের একদিন পরই হঠাৎ করেই ২৬ নভেম্বর রাস্তায় নামে বিএনপি নেতাকর্মী।
হাইকোর্টের সামনে সড়ক অবরোধ করে, বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এদিকে আগামী ৫ ডিসেম্বর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে বিএনপি এক দফা আন্দোলনে যাবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের জেষ্ঠ্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, এই আন্দোলন শেখ হাসিনার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যা হারাবার তা হারিয়েছেন, এখন আর হারাবার কিছু নেই। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছাড়া, মামলা-হামলায় জর্জরিত।
এমনও আছে যে কোনও কোনও নেতাকর্মী ৫ থেকে ৭ বছর ধরে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন না। আর কতদিন এভাবে চলবে। তাই তারা এ থেকে মুক্তির জন্য এবার সবকিছু পেছনে ফেলে মাঠে নামতে চান।
দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কারও প্রতি কারও ক্ষোভ বা মতপার্থক্য থাকলেও আন্দোলনের ব্যাপারে, নেত্রীর মুক্তির ইস্যুতে বিএনপি এক এবং অভিন্ন।
আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা এখন সরকারের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে পরিবর্তন চায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে। দেশের মানুষ বিএনপিকে আন্দোলনের জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করেছে। এখানে আইনের কোনও বিষয় নয়। তাই এই সরকার থাকলে তিনি মুক্তি পাবেন না। আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করতে হবে, এটা শুরু থেকেই বলে আসছি।
অবশ্য যেসব নেতা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলে চিৎকার করছিলেন সেসব নেতারাও এখন বলতে শুরু করেছেন- একমাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশনেত্রীর মুক্তি হবে, অন্যথায় নয়।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, ‘আন্দোলনের প্রস্তুতি তো বিএনপির আছে। বিএনপি কর্মসূচি তো করেই যাচ্ছে; ঘরে-বাইরে দুদিকেই সমান তালে।’