সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-শনিবার ভোর বেলা। ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়ে একটা ফেসবুক পোস্ট। দেখেই প্রচণ্ড ভয় হয়!আবার আরেকটি লংগদুর অবতারণা হতে যাচ্ছে না তো?আমারই বা দোষ কী?ঘর পোড়া গরু তো সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবেই;আমার নিজের ঘর না পুড়ুক,অন্যের ঘর পোড়ার ভয়াবহতা তো এখনো চোখের সামনে প্রজ্বলমান।আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে, রাতারাতি নিঃস্ব হওয়া মানুষের চোখের কান্নার জল এখনও থামেনি।তাই,মধ্যরাতে কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি যদি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন যে,অমুক গ্রামে শতাধিক সেটলার সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালাচ্ছে,গ্রামটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে লুটপাট চালানো হয়েছে।বা অমুক গ্রামটিতে চলছে নির্বিচার হামলা,মারধর আর লুটপাট।সেটলারদের সঙ্গে এইসব হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিচ্ছে..!মানুষজন প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। আপনারাই বলেন,তখন ভয় না পাওয়ার বিন্দুমাত্র কোনো কারণ থাকতে পারে কি?যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এভাবেই আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন মাহের ইসলাম নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক সচেতন বাসিন্দা।অভিযোগ উঠেছে,পাহাড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত উসকে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। কথিত গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে নানা নামে ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে তাতে অপপ্রচার চালিয়ে সংঘাত উসকে দেয়ার চেষ্টা করছে মহলটি। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিনের পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি নষ্ট করে ফায়দা লোটার।এলাকাবাসী ও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে (৩০ জুন ২০১৭) আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী খাগড়াছড়ির বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা রামগড়ের কালাডেবাতে এসে কয়েকজন বাঙালির কাছে চাঁদা দাবি করে।এ সময় কালাডেবার অন্য বাঙালি এবং পার্শ্ববর্তী লামকোপাড়ার বাঙালিরা একত্রিত হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে।তাদের সঙ্গে যোগ দেন কিছু পাহাড়িও।সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করতে করতে তারা সোনাইয়াগার (ত্রিপুরা ও মারমা অধ্যুষিত এলাকা) মধ্য দিয়ে বড় চন্দ্র কারবারিপাড়া (ত্রিপুরা অধ্যুষিত) পর্যন্ত চলে যায়।কিন্তু কাউকে ধরতে ব্যর্থ হয়।চাঁদাবাজরা পালানোর সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।এই ধাওয়ার সময় ওই এলাকার পাহাড়িরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।কয়েকজন বাঙালির অভিযোগ থেকে আরও জানা যায় যে,কয়েকদিন আগেই তাদের কাছে আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে বলেছিল, চাঁদা না দিলে এলাকায় থাকতে দেবে না।এমনকি বাঙালি মেয়েদের তুলে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।এ অবস্থায় বাঙালিদের কাছ থেকে সশস্ত্র চাঁদাবাজদের সংবাদ পেয়ে বিজিবি সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়। তারা উত্তেজিত সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সবাইকে শান্ত রাখেন।ফলে ঘটনা অন্য কোনো দিকে মোড় নেয়নি।রাত প্রায় ১২টার দিকে পুরো এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে।কিন্তু পরিস্থিতি যখন শান্ত হচ্ছে ঠিক সে সময় এ ঘটনাকে পুঁজি করে প্রশাসন ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত উসকে দেয়ার চেষ্টা করে স্বার্থান্বেষী মহল।চেষ্টা চালানো হয় জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উত্তেজনাকর তথ্য ছড়িয়ে সংঘাত বাধানোর।ফেসবুক ঘেঁটে এর সত্যতাও মিলেছে।
রামগড়ের ঘটনায় ইমতিয়াজ মাহমুদ নামে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে এদিন রাত ১২টা ২৫ মিনিটে একটি পোস্ট দেন। তার ফলোয়ারের সংখ্যা ২৮ হাজার।যেখানে তিনি লেখেন, “একটু আগে মাত্র খবর পেয়েছি খাগড়াছড়ির জেলার রামগড় উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সৌনায়া গা ও ব্রত চন্দ্র কার্বারী পাড়াতে পাশ্ববর্তী কালাঢেবা নামক এলাকা থেকে শতাধিক সেটলার (বাঙালি) সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালাচ্ছে।এই গ্রামগুলিতে ত্রিপুরা আদিবাসীদের বাস।রাত এগারোটার দিকে সৌনায়া গা গ্রামটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে লুটপাট চালানো হয়েছে এবং এগারোটার দিকে ব্রত চন্দ্র কার্বারী গ্রামটিতে চলছিল নির্বিচার হামলা,মারধোর আর লুটপাট। সেটেলারদের সাথে এইসব হামলায় স্থানীয় চৌচালা বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিজিবি সদস্যরাও অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।গ্রামের ত্রিপুরা আদিবাসী মানুষজন প্রাণভয়ে পালাচ্ছে বাড়িঘর ছেড়ে।’’এ বিষয়ে ফেসবুকে যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ইমতিয়াজ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তার দেয়া তথ্যই সত্য বলে দাবি করেন।এ ছাড়া ‘সিএইচটি জম্মুল্যান্ড’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপেও বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রুপটির একটি পোস্টে বলা হয়, ‘রোজার সময় লংগুদু পুড়িয়ে দেওয়া হলো,ঈদের পরে পুড়িয়ে দিতে গেলো রামগড়ে। এভাবে আর কত?পাহাড়ের আদিবাসীদের কি একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না রাষ্ট্র ও তার পোষ্য সেনা,বিজিবি, পুলিশ ও সেটেলার বাঙ্গালিরা?তারা চাচ্ছে তা কি? আরেকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নাকি শান্তি?তারা স্পষ্ট করেই বলুক তারা আসলে কি চায়!’ উল্লেখ্য,রামগড়ের ঘটনা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় ফেসবুক ও আঞ্চলিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সংঘাত উসকে দেয়ার চেষ্টা কোনো নতুন বিষয় নয়।এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।রামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ক্যারি মারমা বলেন, ‘ওই দিন রাতে আমরা পাহাড়ি-বাঙালি এক সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের ধাওয়া দেই।পাহাড়িদের বাড়িঘরে কোনো হামলা চালানো হয়নি।সেনাবাহিনী সেখানে আসেনি।’ রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ মো.শরীফুল ইসলাম জানান,সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করতে গিয়ে পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ে বাঙালিরা।তবে তারা কোনো পাহাড়ি জনসাধারণের ওপর হামলা করেনি কিংবা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়নি।রাত ১২টার দিকেই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়,রামগড় এলাকায় উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফের দৌরাত্ম্য একটু বেশি।সম্প্রতি কয়েকটি চাঁদাবাজির ঘটনায় এলাকায় চাঁদা আতঙ্ক বিরাজ করছে।গত ১১ জুন জীবন চাকমা নামের এক ইউপিডিএফ চাঁদাবাজকে একটি মোটরসাইকেলসহ আটক করে এলাকাবাসী বিজিবি ক্যাম্পে সোপর্দ করে।তাকে আটক ও থানায় মামলা দায়েরের কারণে সংগঠনটির সশস্ত্রকর্মীরা ক্ষুব্দ হয়ে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের কয়েক শ রাবার গাছ কেটে ফেলে।তার লেকের বাঁধ কেটে দিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়।লেকের পাড়ের নারিকেল,তেজপাতাসহ বিভিন্ন গাছও তারা কেটে ফেলেছে।একই রাতে অপর এক ব্যক্তির বাগানের ২৫টি রাবার গাছ ও ৩০টি ফলন্ত কলাগাছ কেটে দেয়া হয়।সে সময় তারা ৫ থেকে ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।এর আগে ৯ জুন চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় জেলার রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম দক্ষিণ বালুখালী এলাকায় দিন দুপুরে দুই ধাপে প্রায় দুই শতাধিক রাবার গাছ কেটে ফেলে সন্ত্রাসীরা।ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা জানান,এর তিন মাস আগেও প্রায় দেড় শতাধিক গাছ কেটে দিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।দীর্ঘদিন যাবৎ ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে আসছিল বলে তারা অভিযোগ তাদের।গত ৭ জুন কোনো কর্মসূচি ছাড়াই ইউপিডিএফ কর্মীরা আকস্মিকভাবে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বেপরোয়া গাড়ি ভাংচুর ও মানিকছড়িতে গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে।এ ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।ইউপিডিএফের তাণ্ডবে ২৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও কয়েকজন আহত হয়েছে।২৫টি গাড়ির মধ্যে ২৪টি গাড়ি ভাংচুর ও একটিতে আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।(((মমিনুল ইসলাম,যমুনা নিউজ টুয়েন্টি ফোর.কম)))
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.