আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে দেশে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশে ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত নিজস্ব নির্বাচনী কৌশল কাজে লাগানোর জন্য।
তবে এই নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে সারাদেশে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ পর্যবেক্ষণ করে ভোটারদের মনে আবারো কিছুটা শঙ্কা ফিরে আসছে। দেশের কিছু জায়গায় বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রচারের মাঠে অনেকটাই বেপরোয়া বিএনপির কর্মী সমর্থকরা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলছে হামলা। কোথাও বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে আবার কোথাও নিজদলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ধানের শীষ প্রতীক প্রাপ্ত প্রার্থীদের সমর্থকরা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বিএনপি।
গতকাল ভোটের মাঠের সহিংসতার অংশ হিসেবে নোয়াখালী সদরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে মাথা থেঁতলে ও গুলি করে হত্যা করেছে একদল হামলাকারী, যাদের বিএনপি সমর্থক বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। নিহত মোঃ হানিফ (২৪) নোয়াখালী সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায় গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নুরু পাটোয়ারী হাটে বিএনপি একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে তারা একটি মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হানিফ ও আরেক জন। তখন বিএনপির মিছিলকারীরা প্রথমে হানিফের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটায় এবং পরে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়ে শটগান থেকে গুলি করে।
বিএনপি নেতকর্মীরা যে শুধু প্রতিপক্ষের ওপরই হামলা চালিয়েছে তা নয় তাদের হামলা থেকে রেহাই পাননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি নির্বাচনী প্রচারের উদ্দেশ্যে গতকাল ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও আসছিলেন। পথিমধ্যে দানারহাট ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে গণসংযোগ শুরু করলে ঠাকুরগাঁওয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের একদল উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায় । এতে ৬/৭টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় মির্জা ফখরুলের কমপক্ষে ১০ জন সফর সঙ্গী আহত হয় বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান।
এছাড়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর বন্দরের খোলগোড়ায় নির্বাচনী পথসভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন সদরপুর নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে নির্বাচনী প্রচার শুরুর প্রথম দিনেই ভাঙ্গায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুটি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। উক্ত ঘটনায় আহত হয়েছে ১০ জন।
তাছাড়া গতকাল বরিশালে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায় ধানের শীষের প্রার্থী এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে অভ্যর্থনা জানাতে এসে ফুল দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুগ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসরাত হোসেন কচি তালুকদার। আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালীন বরিশাল বিমানবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত দুইদিনে সারা দেশে বিএনপি সমর্থকদের উল্লেখিত সহিংসতায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটারদের মনে। তবে কি ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের মতো সারাদেশে সহিংসতার দাবানল ছড়িয়ে দিয়ে আবারো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে যাচ্ছে বিএনপি? যারা সহিংসতার দাবানল ছড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পাঁয়তারা করছে তাদের হাতে কতটুক নিরাপদ এই দেশের জনসাধারণ? এই প্রশ্ন থেকেই যায়।