উপজেলা নির্বাচন বর্জনের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বিএনপির সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে একের পর এক বহিষ্কৃত হচ্ছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে স্থানীয় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের নির্বাচন বলে অভিহিত করে বহিষ্কৃতরাও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট। কেন্দ্র ও তৃণমূলের এমন দ্বন্দ্বে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে তৃণমূল বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের সংখ্যা দাঁড়ালো শতাধিক।
দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির তৃণমূলের নেতারা সেই ঘোষণা মানছেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেকেই এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, যাদের একের পর এক বহিষ্কার করছে বিএনপি। এই কারণে রোববার (৩ মার্চ) সিলেট, হবিগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, রাঙামাটি, বান্দরবান ও নীলফামারী জেলার ৮২ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এতে সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দলটির বহিষ্কৃত নেতার সংখ্যা ১০১ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত রোববার রাতে বিএনপির প্যাডে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই ৮২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে বলা হয়, প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ এই নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল দলটি। তবে হাইকমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে দলটির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বিভক্ত করতে চায় এমন নেতারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে বসে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের বহিষ্কার করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে সদ্য বহিষ্কৃত মৌলভীবাজার জেলা যুবদল সহ-সভাপতি লিটন আহমেদ বলেন, যে অভিযোগে নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে তা খুবই সাধারণ বিষয়। উপজেলা নির্বাচনকে কখনোই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক না। এটি সম্পূর্ণ স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। আজ হয়তো বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝতে পারছে না কিন্তু যখন তারা ভুল বুঝতে পারবেন তখন আর শুধরানোর উপায় থাকবে না।
বহিষ্কৃত নেতাদের প্রত্যেকেই বলছেন, যে নির্বাচনে গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তার নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বাছাই করে থাকেন সেখানে রাজনীতির নামে কর্মীদের বহিষ্কার করাটা অমূলক সিদ্ধান্ত। কেবল দল দিয়ে রাজনীতি হয় না, সমর্থকদেরও সহায়তা প্রয়োজন। এই সহজ সত্য ভুলে গেছে বিএনপি। অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের তীব্র প্রতিবাদের রেষ যখন ঘাড়ে এসে পড়বে তখন হয়ত ভুল বুঝতে পারবে বিএনপি। তবে ততো দিনে সর্বনাশের বাকি কিছু থাকবে না। কারণ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই দলের প্রাণ ভোমরা। তারা আরো বলছেন, বহিষ্কৃত নেতারা প্রত্যেকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।