ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন পায়। শনিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
বিশ্ব ব্যাংকের এ ঋণে দেশের বন্যা প্রবণ ১৪টি জেলার সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঋণের অর্থ ‘রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব অ্যাডাপ্টেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন (রিভার)’—প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পাঁচ শতাধিক বহুমুখী-বহুতল বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্র নির্মাণ, সংযোগ সড়ক এবং জলবায়ু সহনশীল সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। যা নদীভাঙ্গনজনিত ক্ষতি ও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। স্বাভাবিক সময়ে কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে ব্যবহার করা হবে। বন্যায় আপৎকালীন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধা রাখা হবে। নারী ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এ প্রকল্প বন্যার আগাম প্রস্তুতিতে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় মানুষজন ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সক্ষমতা বাড়াবে।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের গত ৫ দশকের অংশীদারত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পে উপকূলীয় এলাকার বাইরে বিভিন্ন বন্যা প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নতি করতে সাহায্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এটি শুধু দুর্যোগ পরবর্তী পদক্ষেপের পরিবর্তে দেশে শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি তৈরিতে সহায়ক হবে।’
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ নিচু এলাকায় অবস্থিত একটি ব-দ্বীপ। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবের এটি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বন্যার মাত্রা ও তীব্রতাও বাড়ছে। প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো কোনো বছর ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। আলোচ্য প্রকল্পটি তিস্তা–ব্রহ্মপুত্র–যমুনা, পদ্মা এবং সুরমা–মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত বন্যা প্রবণ জেলাগুলোর জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সাহায্য করবে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার মানুষ এ প্রকল্পের উপকার পাবে।
এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টিম লিডার ইগনাসিও উরুতিয়া বলেন, ‘এই প্রকল্প বন্যার সময় স্থানান্তর সুবিধা তৈরিতে সহায়তা করবে। এতে ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন) সুবিধা প্রদান করবে। একই সঙ্গে বন্য আক্রান্ত লোকজন ও গবাদি পশুর জন্য পর্যাপ্ত জায়গার সংস্থানও করা হবে। স্বাভাবিক সময় তারা এসব অবকাঠামো অন্য কাজেও লাগাতে পারবে।’
প্রকল্পের আওতায় দেশের বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্রগুলোর সংখ্যা ও সেগুলো কি অবস্থায় আছে ওপর একটি ডেটাবেইস তৈরি করা হবে। যা দুর্যোগ প্রস্তুতি জন্য এবং ভবিষ্যতের এ খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাংলাদেশের ডেলটা প্ল্যান–২১০০ এর জন্যও সহায়ক হবে।
এই নমনীয় ঋণ বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে পাওয়া যাবে। ৫ বছরের রেয়াতকাল (এ সময় কিস্তি দিতে হবে না) সহ ৩০ বছরে তা পরিশোধ করতে হবে।