নব্বই শতাংশ কাজ শেষ। আর মাত্র দশ শতাংশ কাজ বাকি। এই দশ শতাংশ কাজ শেষ করে নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল অপার বিস্ময়ের ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’র স্বরূপ উন্মোচিত হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট রেখে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত চীনা ও বাংলাদেশী প্রকৌশলী এবং প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ হারুনুর রশীদ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাই। অর্থাৎ দেশের এই মেগা প্রকল্পটির সফল উন্মোচন করতে তৎপর রয়েছি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দুই টিউবের চার লেনের টানেলের খনন কাজ শেষে একে একে স্থাপিত হয়েছে লেন স্লাব, পেভমেন্ট স্লাব, ক্রস প্যাসেজ। ক্রস প্যাসেজের দুটি কাজ প্রায় শেষ। অপর একটি কাজ সহসা শুরু হচ্ছে। টানেলের মাঝ বরাবর এ তিন ক্রস প্যাসেজ যান চলাচলের ক্ষেত্রে আবশ্যক।
সূত্র জানিয়েছে, ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল সব ধরনের কাজ এগিয়ে চলেছে। ভেন্টিলেশন, পাওয়ার, ফায়ার ফাইটিংয়ের কাজ বর্তমানে চলমান। এছাড় প্রকল্পে ছোট ছোট আরও বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠা এ কাজ পাচ্ছে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ের জন্য সিসিসিসিকে দেয়ার অনুমোদন হয়েছে।
ঝড় জলোচ্ছ্বাসে কোনভাবে সমুদ্রের লোনা পানি যাতে টানেল অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য চউকের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উঁচু একটি রিং রোড নির্মাণ করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ টানেলের প্রতি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। আর টিউবের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। আর ও আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ আরও জানিয়েছেন, চীনা প্রকৌশলীরা টানেল নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ত। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় অধিকাংশ আইটেম চীন থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে। টানেল নির্মাণের সব সেগমেন্টও চীনের তৈরি।
এদিকে টানেলের উভয়প্রান্ত অর্থাৎ উত্তর প্রান্তে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারায় সংযোগ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সামান্য কিছু সিভিল ওয়ার্কস চলছে। এ টানেল যখন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কিছু মহলের উদ্বেগ রয়েছে। ঘোষণা রয়েছে, টানেল চালু হলে বছরে প্রায় ৭৬ লাখ গাড়ি চলাচল করবে।
২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি পৌঁছুবে যানবাহন চলাচল। এক্ষেত্রে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রকৌশল বিভাগকে সংযুক্ত করা হয়েছে। যান চলাচলে যাতে কোন বিঘœ না ঘটে সেক্ষেত্রে চউকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ডিজাইন পাঠানো হয়েছে। পতেঙ্গার সাগরিকা প্রান্তে চউকের উদ্যোগেই আউটার রিং রোড নির্মিত হয়েছে। এদিকে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও নির্মাণ করছে চউক।