বান্দরবান অফিসঃ- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগামী ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সময় নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই দিন তফসিল ঘোষণা না করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের ফলাফলের অপেক্ষার অনুরোধ জানাতে ৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
এ সংক্রান্ত বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে ইসি কমিশনারদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। আলোচনার একপর্যায়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম নুরুল হুদাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যা গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার না হলেও বৈঠকে উপস্থিত থাকা একটি বিশেষ সূত্রের বরাতে হুমকির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, আলোচনা সভা চলাকালে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নুরুল হুদাকে নির্বাচনের পর দেশে না থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়াও নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আততায়ীর হাতে নিহত হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মান্না। বলা হচ্ছে, মান্নার এমন ইঙ্গিত- কৌশলে ‘হত্যার’হুমকির নামান্তর।
এর আগে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানানো হয়। দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ইভিএম মেশিন না দেখেই মন্তব্য করা হচ্ছে। ইভিএম- এ কারচুপি করা সম্ভব না। তিনি ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রয়োজনে আপনারা টেকনিক্যাল লোকদের দিয়ে যাচাই করেন।’
সূত্র জানায়, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোন অনাস্থার কথা বলতে আসেননি। তবে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। মান্নার বক্তব্যের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) ওপরেও তো জনগণের আস্থা নেই। সিইসির এমন বক্তব্যের পর মান্না উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।’ পরে আস্থা ও অনাস্থার প্রশ্নে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়।
তবে বৈঠকের পরে কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেনি, ভেতরে গলার আওয়াজ সৃষ্টি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এবং ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অসদাচরণ বৃহত্তর স্বার্থে প্রকাশ্যে আনেনি নির্বাচন কমিশনররা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি থেকে বিরত রাখতেই পরোক্ষভাবে মান্নার দেয়া হত্যার হুমকিকে চাপা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সবুজ মজুমদার বলেন, কৌশলে যে হুমকি মান্না দিয়েছেন তা হত্যার হুমকি বলতে দ্বিধা নেই। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের রেশ ধরে হঠাৎ হুমকি দিয়ে বসার বিষয়টি সত্যিই আতঙ্কের। আসলে নির্বাচনে সিইসি’র একার কিছু করার থাকে না। এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। যেখানে মান্নার উগ্রতা বোকামি ছাড়া আর কিছু না।
এদিকে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হবে। ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি থাকলেও কমিশন রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে ঘোষণার তারিখ ৪ দিন পিছিয়ে দেয়। অবশ্য ৫ অক্টোবরের বৈঠকের পর তফসিল ঘোষণার তারিখ আবার পেছানো হবে কি না, সে ব্যাপারে কমিশনের তরফ থেকে এখনো কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।