একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের বাসায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি। বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল অভিযোগকে বানোয়াট হিসেবে আখ্যা দিয়ে পুনরায় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল-ফখরুলকে হতাশ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
সূত্র বলছে, মিলারের বক্তব্যের সময় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে অংশ নেয়া দলের অন্যান্য নেতাদের দিকে তাকিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। একাদশ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর একাধিকবার বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অভিযোগ করলেও সরাসরি কখনো প্রত্যাখ্যানের স্বীকার হননি। এবারই প্রথম, বিশ্বের প্রভাবশালী কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কূটনীতিকদের মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ফাঁদে ফেলতেই নামমাত্র নির্বাচনে অংশ নেয়ার নাটক করেছে বিএনপি। এছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের দু’একজন প্রার্থী ছাড়া কেউ নির্বাচনে সিরিয়াস ছিল না বলেই মনে করেন বিদেশি কূটনীতিকরা। নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণার নমুনা দেখলেই বোঝা যায়, এটি একটি রাজনৈতিক ফাঁদ ছিল। যা ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কূট-বুদ্ধির অংশ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশ নেয়া ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নানা তির্যক মন্তব্যের সময় বারবার ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার একাধিকবার ড. কামাল হোসেনের অভিযোগগুলোকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বিশেষ করে বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঐক্যফ্রন্টের ওই নেতা আরো বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের মন্তব্যে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চরম হতাশ হয়েছেন। বৈঠক থেকে নেতারা এতটাই মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন যে, তারা ২৬ ফেব্রুয়ারি ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠকেও অংশ নিতে আসেননি।
জানা যায়, বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সাথে বিদেশি কূটনীতিকদের এই বৈঠক নিয়ে জনমনে নানা কৌতূহল থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত নেতারা সরাসরি গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে বিস্তারিত তুলে ধরতে সংকোচ করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।