সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-‘সমরে আমরা-শান্তিতে আমরা,সর্বত্রই আমরা দেশের তরে’-এই স্লোগান বুকে ধারণ করে দেশের সেবায় সদা প্রস্তুত থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এই বাহিনীর সদস্যরা।এবারও এমনই এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করল সেনাবাহিনী সদস্যরা।রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে রাস্তায় নেমে আসা মাটি সরিয়ে বন্ধ সড়ক যোগাযোগ চালু করতে গিয়ে নতুন পাহাড় ধসে শহীদ হন সেনাবাহিনী ২ কর্মকর্তাসহ ৪ জন।একই ঘটনায় আরো ৯ সেনাসদস্য আহত হয়। যাদের মধ্যে ৫ জনের গুরুত্বর।এদিকে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ধংস স্তুপ সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ পুন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের হতাহতের ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে সেনাবাহিনীর এই কর্তব্যনিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রসংশা করে হাজার হাজার পোস্ট করা হয়।সেনাবাহিনীর শহীদ সদস্যদের ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।এ ছাড়া সেনাবাহিনীর উদ্ধার কাজ,ত্রাণ তৎপরতা ও মেডিকেল সেবার বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে প্রসংশার সাথে পোস্ট করে বলা হয়,এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে উঁচু মাত্রার পেশাদারিত্ব, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে তাতে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা উজ্জল হয়েছে।আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়।তাৎক্ষণিক ভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বেলা ১১টার দিকে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান।পরবর্তীতে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।এদিকে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে নিখোঁজ সৈনিক মো.আজিজুর রহমানের লাশ তিনদিন পর ৫০ ফুট গভীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।নিহত মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়।তিনি ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে কমিশন প্রাপ্ত হন।মাহফুজ পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক।নিহত ক্যাপ্টেন মো.তানভীর সালাম শান্তর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়।তিনি ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে কমিশন প্রাপ্ত হন।তানভীর সদ্য বিবাহিত ছিলেন।নিহত কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হকের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ।তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।আজিজুল বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।নিহত সৈনিক মো.শাহিন আলমের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদিঘী।তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।শাহিন বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক।সৈনিক মো.আজিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর।তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।আজিজুর বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক।এদিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক মঙ্গলবার বিকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।তিনি হতাহত সকল সেনাসদস্য ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।প্রসঙ্গত,তিন দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে সোমবার থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস শুরু হয়।এতে হতাহত হওয়ার পাশাপাশি গোটা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা সোমবার থেকেই উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে।এর মধ্যে মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।তারপরও থেমে যায়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।পাহাড়ে স্মরণকালের বৃহত্তম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্ধার,ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা তৎপরতায় জীবন বাজী রেখে আত্মনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবীর তালুকদার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।তাছাড়াও সকল উদ্ধার তৎপরতা সার্বক্ষনিকভাবে তিনি মনিটরিং করছেন ও যেকোনো ধরণের সহযোগিতায় দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।তার সুদক্ষ নির্দেশনায় সকল ইউনিট অফিসার ও সৈনিকবৃন্দ জীবন বাজী রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদ্ধার তৎপরতা ও আর্তের সেবায়।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙামাটি রিজিয়ন,বান্দরবান রিজিয়ন ও ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের প্রায় দেড় হাজার সদস্য পাহাড় ধসে মাটি চাপা মানুষের উদ্ধার,আহতদের চিকিৎসা সেবা,ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো ও রান্না করা খাবার,বিশুদ্ধ পানি দেয়া,ধংসস্তুপ সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুণরায় চালু করতে আত্ম নিয়োগ করেছে।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সূত্রে জানা গেছে,সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়নের আওতায় ১১০০ সেনা সদস্য রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার তৎপরতার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে।রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী,ভেদভেদীসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনায় নিয়োজিত আছে।এছাড়া শহরের মানিকছড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ পুণপ্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি টিম।কাপ্তাই ও কাউখালীতেও সেনাবাহিনীর স্থানীয় ইউনিটগুলো উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।বিজিবির সদস্যরা রাজনগর,বরকল,হরিণা,ওয়াগ্গাছড়াতে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।এদিকে গতকাল দুপুর থেকে সেনবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সদস্যরা রাঙামাটি জেলার যেসব স্থানে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।সেসব সড়ক থেকে ধংসস্তুপ সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ পুণঃপ্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।এদিকে ১৩ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সেনাবাহিনী সহস্রাধিক দূর্গত লোককে ইফতার ও রাতের খাবার বিতরণ করেছে।বান্দরবান ব্রিগেড সূত্রে জানা গেছে,সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেডের আওতাধীন সেনা সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত লেমুঝিরি এলাকায় দূর্গতদের মাঝে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।এদিকে সেনাবাহিনীর রুমা জোনের আওতাধীন ৭০-৮০ জন সেনা সদস্য কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে উপজেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছে কোথায় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানতে।
এতিমদের ইফতার করানো হলো না মেজর মাহফুজুরেরঃ-নিজ গ্রামের মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের ইফতার করানো হলো না সেনাবাহিনীর মেজর মাহফুজুর রহমানের।তার আগেই নিজের একমাত্র সন্তানকে এতিম করে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিলেন তিনি।মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে চার সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।তাদের একজন মেজর মাহফুজুর রহমান।মেজর মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে।তার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজ্জামেল হোসেন।মাহফুজুর রহমানের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন।তার বেড়ে ওঠা লেখাপড়া সবই ঢাকায়।দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়।মেজর মাহফুজুর রহমান ১৯৮১ সালের ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।১৯৯৯ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৪ লং কোর্সে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের ১৭ জুন কমিশন প্রাপ্ত হন।চাকুরী কালে তিনি লাইবেরিয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর আন্ডারে কাজ করেন।এছাড়াও তিনি চাকুরী সূত্রে ঘানা,ফ্রান্স, বেলজিয়াম,নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সফর করেন।মেজর মাহফুজ ২০০৭ সালের ২২ জুলাই বিবাহ করেন।তার স্ত্রীর নাম মীর সাবরিনা সুলতানা।আবদুল্লাহ মারুফ নামে তাদের ৫ বছরের একটি সন্তান রয়েছে।তার জন্ম ২০১১ সালের ১০ জুলাই।সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সৎ ও ধার্মিক অফিসার হিসাবে তার পরিচিতি ছিল।মাহফুজুর রহমানের মামি মাকসুদা খানম মিনা জানান,প্রতি বছর রোজায় সে বাড়িতে আসে।বাড়ি সংলগ্ন ইরতা দারুল উলুম এতিমখানার (শিশু সদন) শিশুদের ইফতার করায়।গ্রামের গরিব মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করে।এবারও ২০ রোজায় গ্রামের বাড়ি এসে মাদরাসায় ইফতার করানোর কথা ছিল তার।কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না।কথাগুলো বলতে বলতে চোখের পানি মোছেন মাকসুদা।বলেন,বড় ভালো ছেলে ছিল মাহফুজ।এলাকার কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলে সপরিবারে উপস্থিত হত সে।তার অকাল মৃত্যু হওয়ায় গ্রামবাসী এক রত্ন হারাল।প্রতিবেশী মো.ফয়সাল জানান,মাহফুজুরের বাপ-চাচা মিলে তিন ভাই।দুই ভাইয়ের কোনো ছেলেসন্তান নেই।বড় ভাইয়ের ঘরে মাহফুজুই একমাত্র ছেলে।তাই ছোট থেকেই সবার আদরে বড় হয়েছেন তিনি।একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন মাহফুজুর।অসাধারণ ছিল তার ব্যবহার।ছিলেন ধার্মিকও।মেজর মাহফুজুরের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।মেজর মাহফুজুরের মামাতো ভাই তালেবপুর ইউনিয়নের মেম্বার হুমায়ুন কবীর বলেন,ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বড় হলেও নিজ গ্রামের প্রতি তার অনেক টান ছিল।বছরে একাধিকবার তিনি গ্রামে আসতেন।তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত।গ্রামের বাড়িতে মেজর মাহফুজুর রহমানের দাদা এবং নানার বাড়ি পাশাপাশি।সবাই ঢাকায় বসবাস করেন বলে নিজেদের বাড়ি খালি পড়ে আছে।
পাহাড় নিয়ে কোরআনের আয়াত ছিলো যার কভারে তিনি চাপা পড়লেন পাহাড় ধসেঃ-পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ছেলে ক্যাপ্টেন তানভীর সালাম শান্তের জন্ম ১৯৯০ সালের ৩০ মার্চ।তার পিতার নাম আবদুস সালাম,মাতা লুৎফুন্নাহার।১৫ জুলাই ২০০৯ সালে যোগদান করেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে। ৬৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে ২২ জুন ২০১১ সালে কমিশন লাভ করেন তিনি।পরে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় পদোন্নতি পান।চাকুরী সূত্রে তুরস্ক,সুইডেন,ফ্রান্স,ইতালী ও জার্মানী ভ্রমণ করেছেন।বিয়ে করেন ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর।স্ত্রীর নাম নাজিয়া তাহসিন।তানভীর ও তার স্ত্রী দুজনেই অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন বলে জানা যায়।তার ফেসবুকের কাভার ফটোতে আছে পবিত্র কুরআনের সুরা হাশরের একটি আয়াতের অনুবাদ।যেখানে লেখা আছে, ‘যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম,তবে তুমি দেখতে যে,পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে।আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি,যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে’।এদিকে নিহতের ওই পরিবারের স্বজনদের চলছে এখন শোকের মাতম।মৃত্যুর খবর পেয়েই রাজধানীর উদ্দেশ্যে চলে যান বাবা ছালাম মোল্লা ও মা বাবলী বেগম।ক্যাপ্টেন তানভির এক ভাই এক বোন।তানভীরের এমন আকষ্মিক মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে তানভীরের পুরো পরিবার।তানভীরের চাচা মোজাম্মেল মোল্লা বলেন,পরিবারের একমাত্র গর্বের ধন তানভীরকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছে সবাই।
পরিবারের সাথে ঈদ করা হলো না কর্পোরাল আজিজুলেরঃ-পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হলো না সেনাবাহিনীর করপোরাল আজিজুল হকের।মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড় ধসে হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ৪ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তিনিও নিহত হন।আজিজুল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মগটুলা তরফপাসাইল গ্রামের আমির উদ্দিন মুন্সীর ছেলে।মারা যাওয়ার আগের দিন সোমবার রাতে স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা হয় আজিজুলের।স্বামীর শোকে স্তব্ধ আনোয়ারা বেগম জানান,তার স্বামী ২২ জুন ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসবেন এই কথা তাকে জানিয়েছিলেন।তিনি আরও জানান,বাড়িতে এসে ছেলে শাকিল আহমেদ রিফাত ও মেয়ে শাহনাজ আজিজ রিতাকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জে মার্কেটে গিয়ে পরিবার ও স্বজনদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করবেন।কিন্তু তার স্বামীর আর সেই আশা পূরণ হলো না।আনোয়ারা আক্ষেপ করে বলেন,আমার স্বামী প্রায় ৪ মাস আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন।ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আমার স্বামীর অনেক পরিকল্পনা ছিল।এখন কীভাবে স্বামীর স্বপ্ন পূরণ হবে এই প্রশ্ন আনোয়ারার।আজিজুলের বড় ভাই আব্দুল হাশিম জানান,৪ ভাই ২ বোনের সংসারে আজিজুল ছিল ভাইদের মধ্যে ৩ নম্বর।১৯৯৫ সালে সৈনিক পদে আজিজুল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।আগামী বছরের এপ্রিলে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার।তিনি আরও জানান,বাড়িতে এসে অবসরের পেনশনের টাকা দিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাবেন।কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।আবুল হাশিম আরও জানান,তার ভাইয়ের স্ত্রীকে যদি যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি দেওয়া হয় তাহলে এই পরিবারটি দাঁড়াতে পারবে।তিনি এ ব্যাপারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।আজিজুলের মৃত্যুতে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।এদিকে তার মৃতদেহ দাফনের জন্য পারিবারিক গোরস্থানে কবর প্রস্তুত করার কাজ চলছে।স্থানীয় মগটুলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মামুন বলেন,আজিজুলের অকাল মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। আমরা এলাকাবাসী অপেক্ষা করছি কখন আজিজুলের মৃতদেহ এলাকায় এসে পৌঁছবে।
রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসে নিহত সেনাসদস্য চঞ্চলের বাড়িতে শোকের মাতমঃ-রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত সেনাসদস্য শাহীন আলম ওরফে চঞ্চলের (৩২) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একমাত্র ছেলে শাহীনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই মা-বাবা বোনসহ পরিবারে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।কেউ কোনো কথা বলছেন না।যেন শোকে পাথর হয়েছেন পড়েছে সবাই।জানা গেছে,বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের সরোয়ার্দী হোসেনের একমাত্র ছেলে শাহীন আলম ওরফে চঞ্চল ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।তিনি ২০১২ সালে চমন বেগম নামের এক নারী পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করেন।তাদের আবু তাহা নামে চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।নিহত সেনাসদস্য শাহীনের স্ত্রী বর্তমানে ময়মনসিংহের র্যাবে কর্মরত রয়েছেন।শাহীন স্থানীয় আদমদিঘী নশরতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।পরে চাকরি করা অবস্থায় স্নাতক ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।নিহতের বাবা সরোয়ার্দী জানায়,মঙ্গলবার সকালেও তার ছেলের সাথে মুঠোফোনে পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা হয়।সন্ধ্যার দিকে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন রাঙামাটির মানিকছড়িতে তার ছেলে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছে।বগুড়া সেনানিবাস থেকে নিশ্চিত খবর জানার পর থেকেই পরিবারের শুরু হয় শোকের মাতম।তার মা সেলিনা বেগম একমাত্র ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাগল হয়ে পড়েছেন।