নিউজ ডেস্কঃ- যেকোন ইস্যুতে কূটনীতিকদের দ্বারস্থ হওয়া স্বভাবে পরিণত হয়েছে বিএনপির। কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের এখতিয়ার না থাকলেও সরকারকে বিদেশি রাষ্ট্রের চাপে ফেলতে নির্বাচনী পরিস্থিতি সম্বন্ধে কূটনীতিকদের জানাতে একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বারিধারায় কানাডিয়ান হাইকমিশনে গিয়েছিলো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। এমনকি নির্বাচনী জোট, নির্বাচনী পরিস্থিতি এবং তফসিল সম্বন্ধে অবগত করতে ১২ নভেম্বর বিকাল ৪টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিভন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসের রাজনৈতিক সচিবদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে নির্বাচনী পরিস্থিতির উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জানা গেছে, রোববার (১১ নভেম্বর) ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বারিধারায় কানাডিয়ান হাইকমিশনে যান। মূলত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সে সম্পর্কে অবগত করতে ও বিএনপিন বিশেষ আর্জি তুলে ধরতে তিনি কানাডিয়ান হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি, রাজনৈতিক নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং নির্বচানী তফসিল ঘোষণা সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের জানাতে আগামীকাল সোমবার (১২ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় বিএনপি চেয়ারপরসনের গুলশান কার্যালয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে বিএনপি। যেখানে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের রাজনৈতিক সচিবরাও অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএনপি।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এর আগেও বিএনপি নেতারা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশের দ্বারস্থ হয়। প্রতিটি সফরেই তারা উক্ত দেশগুলোর কাছে বিশেষ কোন সহযোগিতার আশ্বাস না পেয়ে অবশেষে জাতীয় ঐক্য নামে একটি জোট গঠন করে। সরকারের সঙ্গে ওই জোটের কল্যাণে বিএনপি দুটি সংলাপেও অংশ নেয়। জাতীয় ঐক্যের অন্যান্য নেতারা সংলাপের ফলপ্রসূতা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি। এরপর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করায় আর কোন পথ খোলা না পেয়ে এবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে নতুন পরিকল্পনা চালাচ্ছে বলেও মনে করছেন রাজনীতি সচেতন সুশীল সমাজ ও বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির এমন পদক্ষেপ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে বিএনপি নেতারা বারবার নির্বাচনকেন্দ্রিক আর্জি নিয়ে প্রতিহত হওয়ার পরেও তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন করে কূটনীতিকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন- এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিএনপির এমন পদক্ষেপ নির্বাচনী পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আমি মনে করি। পুরো দেশের মানুষ যখন নির্বাচন নিয়ে একটি আমেজের মধ্যে রয়েছে তখন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি না নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে যাচ্ছেন নির্বাচনী সমাধান চাইতে- যা দেশের অভ্যন্তরীণ ভাবমূর্তিকেও আঘাত করবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এমন কূটকৌশল একদিকে যেমন শিষ্ঠাচার বহির্ভূত তেমনি অপরাধ। নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে এ বিষয়ে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলেই আমার মনে হয়।