মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় ধাপে ৪২৮টি পরিবারের মোট ১৮০৫ জনকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেলা সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয় দলটি নতুন ঠিকানায় এসে পৌঁছায়। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৩৩, নারী ৫২৩ ও শিশু ৮৪৮ জন। প্রথম ধাপে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছেন। এতে চরটিতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৪৭। প্রথম দলের মতোই দ্বিতীয় দলটি স্বেচ্ছায় ভাসানচরে পৌঁছে আনন্দে আত্মহারা। প্রথম দলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য এমন সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
এর আগে সোমবার সকালে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বাসে করে রওনা দেয় রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল। তারা সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়। এখানেই তাদের রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বোটক্লাব থেকে নৌবাহিনীর ৪টি জাহাজে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়। আর একটি জাহাজে রোহিঙ্গাদের মালামাল নিয়ে যায়। এছাড়া নৌবাহিনীর একাধিক স্পিডবোট সার্বক্ষণিক পাহারায় জাহাজগুলোকে ভাসানচরে নিয়ে আসে। জাহাজে প্রথমে হালকা নাশতা এবং পরে দুপুরের খাবার দেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১২টায় ভাসানচরের নৌবাহিনীর জেটি স্পর্শ করে। সেখানে নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা নতুন অতিথিদের স্বাগত জানায়। এরপর একে একে ৪টি জাহাজ ভিড়ে জেটিতে। সেখান থেকে তাদের নেয়া হয় ওয়্যারহাউসে। পরে ভাসানচর আবাসন প্রকল্পের পরিচালক নৌবাহিনীর কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর নেতৃত্বে¡ মোনাজাত করা হয়। এ সময় রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এরপর তাদের ৫, ৬ ও ১১নং ক্লাস্টারের ৬টি রুমে তোলা হয়। এর আগে বিকালেই প্রত্যেক মাঝিকে (দলনেতা) রুমের চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে নতুন অতিথিদের স্বাগত জানাতে ভাসানচরে নানা ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। ভাসানচর থেকে জেটিতে নামার সামনেই বড় ব্যানারে লিখা ছিল- ‘ভাসানচর এ স্বাগতম’। প্রথম দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দলটির কুশল বিনিময়ে আশ্রয়শিবিরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। করোনার কারণে জাহাজ থেকে নামার পর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কক্সবাজারের বদ্ধজীবনে হাঁপিয়ে উঠা শিশুরা উন্মুক্ত পরিবেশ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। চারিদিকে খোলা জায়গা, নির্মল বাতাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ব্রিটিশ কোম্পানির ডিজাইনে পাকা ঘর, উন্নত স্যানিটেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, বাজার এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ সবই আছে। এসব দেখে সবাই খুশি।
দ্বিতীয় ধাপে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে আসা আলী আকবর মঙ্গলবার মুঠফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের আত্মীয়রা আগেই এসেছে। তাদের কাছে জেনেছি, এখানে থাকা ও খাবারের কোনো ধরনের অসুবিধা নেই। চিকিৎসাসেবাও অনেক ভালো। তাই কক্সবাজার থেকে আমরা পরিবারের ৯ সদস্য ভাসানচরে চলে এসেছি। এখানে ভিডিওকলে যা দেখেছি, বাস্তবে আরও সুন্দর। এমন জায়গায় থাকতে পারব, তা আমি কল্পনাও করিনি। তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা যেন আমাদের নিজ দেশে মিয়ানমারে পাঠাতে সাহায্য করে-এটাই আমাদের চাওয়া।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে এসেছেন মো. ইসমাঈল। তিনি মঙ্গলবার মুঠফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে মোট ৭ জন ভাসানচরের নতুন শহরে এসেছি। এখানে সবাই আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। তারা আমাদের জন্য থাকার ঘর দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম যেখানে ছিলাম, সেখানে পলিথিন ও বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘর বানানো। আর ভাসানচরে পাকা ঘর। আমি ও আমরা যারা এসেছি, তারা অনেক আনন্দিত।
জানতে চাইলে ভাসানচর আবাসন প্রকল্পের পরিচালক নৌবাহিনীর কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রথম ধাপে ১৬৪২ জন স্বেচ্ছায় যারা (রেহিঙ্গ) এসেছিলেন তারা ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সেখান থেকেই আরও ১৮০৫ রহিঙ্গা দ্বিতীয় ধাপে ভাসানচরে এসেছে। আশা করি তারা সবাই ভালো থাকবেন। তিনি জানান, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প আমাদের অত্যন্ত পরিশ্রমের ফসল। নৌবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের ত্রুটি এড়িয়ে দিনরাত কাজ করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুবিধা সংবলিত পরিকল্পিত অস্থায়ী আবাসন
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.