সারাবিশ্বের সকল লবিং ফার্মের অলিগলিই হয়তোবা বিএনপি-জামায়াতের পরিচিত। ক’দিন পরপর এই জোটের লবিং ফার্ম সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত যেসকল সংবাদ উঠে আসছে গণমাধ্যমে, তা বিস্ময়কর। ক্ষমতায় থাকতে স্বীয় অপকর্মে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ড উপহার দিয়েছিলো বিএনপি-জামায়াত। এবার কি তারা নতুন রেকর্ডের পেছনেই ছুটছে!
তাদের চোখ এবার লবিং ফার্মের দিকে।পূর্বের একাধিক লবিং ব্যর্থ হবার পরেও দমে যায়নি জোটটি। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে স্বার্থ হাসিলের মিশনে নেমেছেন তারা। এটি হয়তোবা লবিংয়ে বিশ্বে প্রথম হওয়ার মিশনও!যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আনুকূল্য পেতে জামায়াতে ইসলামী ওয়াশিংটনে ‘বড় অঙ্কের’ অর্থ দিয়ে একটি লবিং ফার্ম ভাড়া করেছে বলে দাবি করেছেন ‘লিবার্টি সাউথ এশিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা সেথ ওল্ডমিক্সন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘লিবার্টি সাউথ এশিয়া’ দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার বিকাশে কাজ করে থাকে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সেবা দেয় তারা।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির ‘হাডসন ইনস্টিটিউট’ নামের খ্যাতনামা একটি থিঙ্কট্যাংকের উদ্যোগে ‘স্ট্যাবিলিটি, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইসলামিজ্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় ওল্ডমিক্সন জামায়াতের বিষয়ে ওই তথ্য দেন।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা প্রচলিত আইনের সুযোগ নিয়ে মোটা অর্থ নিচ্ছেন, তারাও জানেন না, কারা দিচ্ছে এই অর্থ এবং কী তাদের মোটিভ। আর এই লবিং ফার্মের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে যাতে তারা (জামাত-শিবির) নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে সে ধরনের চাপ প্রয়োগের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
“এজন্য এই ফার্ম কংগ্রেস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দেন-দরবার করবে। অর্থাৎ তারা আবারো অপতৎপরতা চালাবে, কিন্তু সরকার কিছু বলতে পারবে না-এমন প্রত্যাশায় অর্থ ব্যয় করছে।”
পূর্বেও একাধিকবার মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন লবিং ফার্মের সাথে চুক্তি করে বিএনপি-জামায়াত। ফার্মগুলো বিএনপি-জামায়াতের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়। কিন্তু সেসকল দেশের সরকার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ায় পুরো প্রকল্প ভেস্তে যায়।
এ আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের দমনে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাকে সর্বাত্মক সমর্থন দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে মার্কিন প্রশাসনের। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও বাংলাদেশের ৭৬% মানুষই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে।
এই কংগ্রেসম্যান বলেন, “বাংলাদেশের আপামর মানুষেরই প্রত্যাশা, সুষ্ঠু পরিবেশে ভালো একটি নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাক-এটিও যুক্তরাষ্ট্রের একান্তই চাওয়া। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু চরমপন্থি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের জন্যে বড় একটি হুমকি বলে মনে হচ্ছে।”
আভা শঙ্কর বলেন, “জামায়াতে ইসলামী আমেরিকাতেও তৎপরতা চালাচ্ছে ইকনা ও মূনার ব্যানারে। সেবামূলক কর্মকাণ্ডের আড়ালে এ দুটি সংগঠনের তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক-রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি ওদের জিহাদি মতবাদের প্রচার চালানো হচ্ছে।”
তিনি বলেন, ইকনার প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকায়, যেখানে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পলাতক আশরাফুজ্জামান বাস করছেন। আর মূনা (মুসলিম উম্মাহ ইন নর্থ আমেরিকা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে।
“এটি পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে একাত্তরের ঘাতক হিসেবে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আল বদর নেতা মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম আলীর ওপর।”
ইনস্টিটিউটের স্টার্ন কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত পৌনে দুই ঘণ্টার এ আলোচনায় স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেছে বেছে মেধাবী বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেওয়া আল বদর চৌধুরী মঈনুদ্দিন লন্ডনে বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ‘মুসলিম কাউন্সিল’। আরেক আল বদর আশরাফুজ্জামান খান নিউ ইয়র্কে বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ইকনা। সেবামূলক এ দুটি সংস্থার মাধ্যমে মূলত জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই চালানো হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দুটি রাষ্ট্রে।”
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে নর্থ ক্যারোলিনায় বসবাস করছেন জানিয়ে স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “তিনিসহ আরো অনেকেই ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, মিশিগান, শিকাগো, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জামাত-শিবিরের মতবাদ প্রচার করছেন। অর্থ ব্যয়ে তারা মার্কিন রাজনীতিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন।