দেশজুড়ে প্রস্তুতি, টিকা যাচ্ছে জেলায় জেলায়


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ জানুয়ারি, ২০২১ ৯:২৪ : অপরাহ্ণ 263 Views

ঢাকায় করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধনের পর শুরু হয়েছে দেশব্যাপী টিকা সরবরাহ। দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো হচ্ছে টিকার প্রথম ধাপের টিকার চালান। একইসঙ্গে চলছে টিকাদানের জন্য নির্ধারিত সব হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি। রাজধানীর ৫ হাসপাতালে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ডাই রান। সপ্তাহব্যাপী এই কার্যক্রম শেষে ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা।

এর আগে গত ২৭ তারিখ রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড টিকা প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি। ওইদিন ২৬ জনের শরীরে করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা যে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ কিনেছি তার মধ্যে ৫০ লাখ এসে গেছে। এরপর আরও আসতে থাকবে। কাজেই এই ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া এর আগে উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এদিকে ভারতের সেরামের তৈরি ৭০ লাখ ভ্যাকসিন পর্যায়ক্রমে সারা দেশে পাঠানোর কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জুন মাসের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ফেব্রম্নয়ারির ৭ তারিখে দেশব্যাপী টিকাদান শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া প্রস্তুতি চলছে।

শুক্রবার দেশজুড়ে সরবরাহকৃত টিকা নিয়ে আমাদের আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজশাহীতে ৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ

রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় প্রথম ধাপে টিকা পাবেন ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ। এই টিকা প্রয়োগের জন্য জেলায় জেলায় কেন্দ্র ও বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও টিকা প্রয়োগের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে করণীয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে বিভাগের আট জেলায় এক যোগে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।

তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার জন্য ৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দ হয়েছে। শুক্রবার সব জেলায় টিকা পৌঁছে গেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনস্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জেলা ইপিআই স্টোরে টিকাগুলো রাখা হয়েছে।

ডা. হাবিবুল বলেন, আগামী ৭ ফেব্রম্নয়ারি বিভাগের আট জেলায় এক যোগে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি চলছে। তবে সব কেন্দ্র এক সঙ্গে চালু করা হবে না। প্রথম পর্যায়ে জেলা শহরে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলায় দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যারা টিকা গ্রহণ করবেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। এছাড়াও যারা টিকা প্রয়োগ করবেন ও তাদের সঙ্গে যেসব স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন তাদেরও তালিকা হয়েছে। টিক প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের একদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে চারটি বুথে টিকা দেওয়া হবে। প্রতিটি বুথে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবে।

ডা. হাবিবুল আহসান বলেন, প্রথম ধাপে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর পর সাংবাদিক, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের শরীরে টিকা দেওয়া হবে। সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকা প্রয়োগের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিকে তার কেন্দ্রের নাম, বুথ, ক্রমিক, তারিখ এবং সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে, রাজশাহীর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৯ কাটন টিকা। এর মধ্যে জেলার জন্য ১৫ কাটন ও সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য চার কাটন। প্রতিটি কাটনে ১২০০ ভায়াল থাকবে। একটি ভায়ালে ১০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সে হিসেবে রাজশাহীতে প্রথম ধাপে ২ লাখ ২৮ জনকে টিকা দেওয়া হবে বলে জানান, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে রাজশাহীতে ১৯ কাটন টিকা এসে পৌঁছেছে। সেগুলো জেলা ইপিআই স্টোরে টিকাগুলো রাখা হয়েছে।

ডা. কাউয়ুম বলেন, রাজশাহী নগরে চারটি কেন্দ্রে ১৬টি বুথে টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, রাজশাহী পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল ও রাজশাহী সেনানিবাস হাসপাতাল।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, এ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগের জন্য একটি কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। চারটি বুথে সেখানে টিকা দেওয়া হবে। এখানে প্রথমে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রয়োগ করা হবে। তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

বরিশালে ৪ লাখ ডোজ

বরিশাল বিভাগে এসে পৌঁছেছে প্রায় ৪ লাখ করোনার টিকা। শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে আসা টিকার এই চালান গ্রহণ করেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস। জানা গেছে, প্রথম চালানে, ৩৩ কাটনে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। প্রাথমিকভাবে ২৯ কাটন বা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ডোজ ৬ জেলায় প্রয়োগ করা হবে। টিকা কর্মসূচিতে ৮৮৮ জনের মধ্যে প্রয়োগকারী থাকবেন ১৩২ জন। স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন ৭৫৬ জন। স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, আশা করা যায় বরিশাল বিভাগে ৭ বা ৮ ফেব্রম্নয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা যাবে। ১৫ ক্যাটাগরির মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা বণ্টন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে বরিশাল জেলার জন্য ১ লাখ ৬৮ হাজার, পটুয়াখালীতে ৪৮ হাজার, ঝালকাঠিতে ১২ হাজার, পিরোজপুরে ৩৬ হাজার, ভোলায় ৬০ হাজার এবং বরগুনায় ২৪ হাজার টিকা এসেছে। টিকা গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনসহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ৮ হাজার ডোজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাভাইরাসের ১ লাখ ৮ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি বিশেষ ভ্যানে করে করোনাভাইরাসের টিকাগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে পৌঁছে। ৯টি প্যাকেটে ১০ হাজার ৮০০ ভায়ালে মোট ১ লাখ ৮ হাজার ডোজ টিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে।

সকালে পৌর শহরের মেড্ডা এলাকার ইপিআই ভবনের সামনে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উলস্নাহ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন টিকাগুলো গ্রহণ করেন। পরে ইপিআই ভবনের কোল্ড স্টোর রুমে টিকাগুলো রাখা হয়েছে। আগামী ফেব্রম্নয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রদান শুরু হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টিকা প্রদানের জন্য চিকিৎসক ও টিকাদানকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৮টি টিম ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে দুইটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুইজন করে টিকাদানকর্মী (নার্স) ও চারজন করে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে।

প্রথম ধাপে করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের নার্স-চিকিৎসকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা-বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনী, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমের কর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, ব্যাংক কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অগ্রাধিকার পাবেন টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উলস্নাহ বলেন, টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর মেবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে টিকা গ্রহণের সময় ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ফেব্রম্নয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।

পাবনায় ৮৪ হাজার ডোজ

পাবনায় ৮৪ হাজার মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে টিকাগুলো পাবনা এসে পৌঁছেছে। পাবনার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. একে আবু জাফর জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৮৪ হাজার করোনা প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিটি অ্যাম্পুল থেকে ১০ জনকে টিকা প্রদান করা হবে। সে হিসেবে ৮৪ হাজার মানুষের মধ্যে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে তালিকা তৈরি ও রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। আগামী ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে এই টিকা প্রয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রেরিত টিকাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ এবং গুদামজাত করা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

ফরিদপুরে ৬০ হাজার ডোজ

ফরিদপুরে পৌঁছেছে ৬০ হাজার ডোজ টিকা। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় বেক্সিমকো ফার্মার একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ভ্যানে করোনার প্রতিরোধক টিকা শহরের জেনারেল হাসপাতালে এসে পৌঁছে। সির্ভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান সেটি গ্রহণ করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসেনর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া আক্তার, পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন, বেক্সিমকো ফার্মার সৈয়দ আহমেদ সিকদারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

ফরিদপুরের সির্ভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ে ৬০ হাজার ডোজ টিকা শুক্রবার সকালে গ্রহণ করেছি। জেলা ও উপজেলায় টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জেলার প্রতি উপজেলায় ১টি, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি ও সদর হাসপাতালে ১টি মোট ১৩টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হবে। টিকার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

ঝিনাইদহে ৬০ হাজার ডোজ

ঝিনাইদহে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ করোনার টিকা পেঁৗঁছেছে। শুক্রবার দুপুরে বেক্সিমকো কোম্পানির ফ্রিজার ভ্যান যোগে পাঁচ কাটন টিকা পৌঁছায়। টিকা গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডাক্তার সেলিনা বেগম। এ সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ টিকা বুঝে নেওয়া হয়েছে। এটি ইপিআই ভবনের স্টোর রুমে রাখা হয়েছে। আগামী ১ এবং ২ ফেব্রম্নয়ারি সিভিল সার্জন অফিসে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে। এছাড়া টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায়ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে টিকা প্রদান শুরু হবে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সব উপজেলা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের তালিকা আগামী দু-দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে জমা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাটোরে ৪৮ হাজার ডোজ

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নাটোরে ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে। শুক্রবার চার হাজার ৮শ’ অ্যাম্পুল কোভিড-১৯ টিকা পৌঁছেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকাগুলো গ্রহণ করেন টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক যুবায়েরসহ ট্যাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্রিজার ভ্যান থেকে চারটি কাটনে টিকাগুলো হস্তান্তর করেন প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আসলাম হোসেন।

সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, চার হাজার ৮০০ অ্যাম্পুল টিকা ৪৮ হাজার ব্যক্তিকে দেওয়া সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে আরও টিকা আসবে। আগামী ৮ ফেব্রম্নয়ারি নাটোর সদর হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূিচ শুরু হবে। এর আগে টিকা প্রদানকারী নার্স ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা জেলা কমিটির সভায় জেলায় টিকা প্রদানের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করে অচিরেই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে কার্যকর সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ হাজার ডোজ

চুয়াডাঙ্গায় করোনা টিকার ৩৬ হাজার ডোজ পৌঁছেছে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায়। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের টিকাবাহী গাড়িটি চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে প্রবেশ করলে সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কান্তি দাস, সিনিয়র কনস্যালট্যান্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, ডা. আবুল হোসেন, মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আউলিয়ার রহমান,ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক কেএম মুহসীনিন মাহবুব, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়াদ্দার টোটন প্রমুখ।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ডেপুটি ম্যানেজার ডিস্ট্রিবিউশন কামরুল আহসান জানান, শুক্রবার খুলনা বিভাগের ৬টি জেলায় টিকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে- কুষ্টিয়ায় ৫ কাটন, মেহেরপুরে ১ কাটন, চুয়াডাঙ্গায় ৩ কাটন, ঝিনাইদহে ৫ কাটন, মাগুরায় ২ কাটন ও নড়াইলে ২ কাটন। প্রতিটি কাটন ১ হাজার ২শ করে ভায়াল আছে। এতে ১২ হাজার ডোজ হবে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ ভাগে জেলায় ৫০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। টিকাগুলো সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই স্টোরে আইএলআর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে এই টিকা প্রদানের জন্য কমিটি হয়েছে। যারা পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে এবং এই কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করবে। পর্যায়ক্রমে জেলার সবাইকে এ টিকা দেওয়া হবে।

মাদারীপুরে ৩৬ হাজার ডোজ

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যে মাদারীপুর জেলা ছিল প্রথম এবং দেশের প্রথম লকডাইনকৃত জেলাও মাদারীপুর। সেই মাদারীপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে টিকার প্রথম চালান এসে পৌঁছেছে। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে এ টিকা জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। প্রথম চালানে ৩ হাজার ৬০০ ভায়েল (শিশি) টিকা রয়েছে। একটি ভায়াল থেকে ১০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে। অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০০ ভায়েল থেকে ৩৬ হাজার মানুষকে এ টিকা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসারা।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জহিরুল হক মন্ডলের কাছ থেকে টিকার অ্যাম্পুলভর্তি কার্টন বুঝে নেন জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত চিকিৎসক এস এম খলিলুজ্জামান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা, ওষুধ প্রশাসন মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মহেশ্বর মন্ডলসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, জেলার সদর হাসপাতাল ছাড়াও চারটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোয় টিকা সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রথমে টিকাগুলো সবই সদর হাসপাতালের ইপিআই ভবন থেকে সরবরাহ করা হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. এস এম খলিলুজ্জামান বলেন, টিকার প্রথম চালানে ৩ হাজার ৬০০ ভায়েল থেকে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা পাব। ৩৬ হাজার মানুষকে একটি করে টিকা আমরা দিতে পারব। টিকাগুলো সদর হাসাপাতালর ইপিআই ভবনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন জানান, জেলা ও উপজেলা সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা যারা মাঠে থেকে জনগণের সেবা দিয়েছে ও আগামীতে দেবে তারাই আগে টিকা পাবে। একই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, গণমাধ্যমকর্মীরা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টিকা পাবে।’

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!