ঢাকার মানুষের মাথার ওপর দিয়ে চলবে দেশের প্রথম মেট্রো রেল।এর নির্মাণকাজের জন্য রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় খানাখন্দ, যানজট, ধুলাবালি,জলাবদ্ধতা মানুষকে ভোগাচ্ছে কয়েক বছর ধরে।আশার কথা, অনেক এলাকায় নির্মাণকাজ শেষ হয়ে আসছে।সেখানে নিচের সড়ক থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে সংস্কারকাজ।এতে মেট্রো রেলের নিচের সড়ক যেমন মসৃণ হয়েছে,তেমনি বেশ প্রশস্তও লাগছে সড়ক।উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার পথে চলাচল করবে মেট্রো রেল। প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে মেট্রো রেল চলাচল করার কথা আছে। সে লক্ষ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সড়কের যে অংশে কাজ শেষ হচ্ছে সেখানে নিচের সড়ক থেকে নির্মাণসংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর আগারগাঁও, তালতলা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও পল্লবী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মেট্রো রেলের নিচে সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। আগারগাঁও ও তালতলা এলাকার সড়কের কাজ শেষ। এসব সড়কের মাঝখানের ডিভাইডারে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। ডিভাইডারে রেলিং বসানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। আগারগাঁও, তালতলা ও পল্লবীর সড়ক নতুন রূপে ফুটে উঠেছে। দেখলে মনে হবে, আগের তুলনায় সড়কের প্রশস্ততা বেড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫-এর সহকারী প্রকৌশলী (পুর) আব্দুল্লাহ আল নূর আশেক কালের কণ্ঠকে বলেন, আগারগাঁও এলাকায় মেট্রো রেলের নিচের সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এই সড়কে আগেও দুই পাশে তিন লেন করে ছয় লেন ছিল। এখনো তাই আছে। তবে সড়কের পাশের অবৈধ দখল তুলে দেওয়ায় সড়কটি আগের তুলনায় প্রশস্ত মনে হচ্ছে। দেখে স্বস্তি লাগে।
এক প্রশ্নের জবাবে উত্তর সিটির এই সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা রাখবে কি না, তা আমাদের জানা নেই। সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো সড়ক যান চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হবে।’
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের ৯টি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। স্টেশনগুলোর ছাদে সিস্ট বসানোর কাজ শেষ। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজও শতভাগ শেষ। ডিপো এলাকার অবকাঠামোগত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের কাজ হয়েছে ৯১.৪১ শতাংশ।
শ্যামলীর বাসিন্দা আবদুল আলিম নিয়মিত আগারগাঁও হয়ে মহাখালীতে কর্মস্থলে যান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মেট্রো রেলের কাজ যে কী পরিমাণ ভোগান্তি দিয়েছে, তা আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। এখন এমন রাস্তা দেখে স্বস্তি পাচ্ছি। ভোগান্তির দিন মনে হয় শেষ হতে চলল।’
কথা হয় পথচারী হাওলাদার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্য প্রকল্পের কাজ শেষে সড়কে সেগুলোর জঞ্জাল পড়ে থাকতে দেখেছি। এখন নিচের সড়ক দেখে ভালো লাগছে। চোখে প্রশান্তি পাচ্ছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, যেসব জায়গায় মেট্রো রেলের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে, সেসব এলাকায় নিচের সড়ক সংস্কারেও কাজ শুরু হয়েছে। তবে মেট্রো রেলের নিচের সড়ক এখনো সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়নি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘সড়কের সংস্কারকাজ শেষ করলেও সিটি করপোরেশন এখনো সড়ক বুঝে পায়নি। আমরা সড়কের কাজ শেষ করে মেট্রো রেলকে দিয়েছি। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ সড়কটি আমাদের বুঝিয়ে দেবে।’
আগারগাঁও এলাকায় সড়কের কাজ শেষ হলেও তালতলা থেকে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এলাকায় সড়কের কাজ চলছে। তুলনামূলকভাবে এই এলাকায় কাজের গতি কিছুটা কম বলে স্থানীয়রা জানায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, তালতলা থেকে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এলাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। এখন শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনের নিচে ২৫০ মিটারের মতো সড়কের কাজ বাকি। ওয়াসার জন্য কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে।