তিন দশকের বেশি সময় পর নতুন করে দুই লাখ রিকশাকে নিবন্ধন (লাইসেন্স) দিতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হবে এই লাইসেন্স। এসব রিকশার নম্বর প্লেটে থাকবে কিউআর কোড। নকল এড়াতে নম্বর প্লেটে যুক্ত করা হবে জলছাপও। ঢাকা শহরে চলমান অবৈধ রিকশা থেকে রাজস্ব পেতে এবং রাজধানীর রিকশা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এসব রিকশা রাস্তায় নামবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বর্তমানে রাজধানীতে মোট কত রিকশা চলে এর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কারোর কাছে নেই। তবে ডিএনসিসির দেওয়া তথ্য বলছে, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে অবিভক্ত ঢাকায় লাইসেন্সধারী মোট রিকশা ছিল ৮৮ হাজার ১৬০টি। সিটি করপোরেশন বিভক্তির পরে ২০১১-১২ অর্থবছরে ডিএনসিসির কাছে ২৮ হাজার ১৫২টি রিকশা হস্তান্তর করা হয়। এর পরে নতুন করে আর কোনো রিকশার লাইসেন্স দেয়নি উত্তর সিটি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপ থেকে জানা যায়, রাজধানীতে চলে প্রায় ১০ লাখ অবৈধ রিকশা।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ এই ত্রিচক্র যানের মধ্য থেকে দুই লাখ রিকশার বৈধতা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। আগামী দুই মাসের মধ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন কার্যক্রম শুরু হবে। রিকশার মালিককে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ দিয়ে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে দুই লাখ রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। মোবাইল ফোন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে নির্বাচিতদের জানিয়ে দেওয়া হবে। একবার যারা লাইসেন্স পাবে, তারা পরবর্তী পাঁচ বছর আর লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবে না। প্রথম ধাপে নমুনা হিসেবে ২০ হাজার আবেদনকারীকে এই পদ্ধতিতে লাইসেন্স দেবে ডিএনসিসি। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বাকি রিকশাগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হবে। এক বছরের জন্য প্রতিটি রিকশার লাইসেন্স ফি হবে এক হাজার ২০০ টাকা। পাঁচ বছরের জন্য এই ফি হবে ছয় হাজার টাকা। ফলে রিকশা থেকে সিটি করপোরেশনের প্রতিবছর রাজস্ব আয় হবে ২৪ কোটি টাকা। পাঁচ বছরে এই আয় দাঁড়াবে ১২০ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই নগরে লাইসেন্সধারীর চেয়ে অবৈধ রিকশার সংখ্যাই বেশি। এর ফলে রাজধানীতে ট্রাফিকের চাপ বাড়ছে এবং সিটি করপোরেশন তার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দুই লাখ রিকশাকে নতুন করে লাইসেন্স দেব। অবৈধ রিকশাকে বৈধ করতেই আমাদের এই কার্যক্রম। নতুন লাইসেন্স পাওয়া রিকশার নম্বরপ্লেটে থাকবে কিউআর কোড। ফলে কোনো রিকশা যদি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাহলে এই কোডের মাধ্যমে রিকশার গ্যারেজ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তা বজায় থাকবে।’
যানজট যন্ত্রণায় জেরবার ঢাকা মহানগরের জন্য নতুন করে দুই লাখ রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক—এমন প্রশ্নে মেয়র আতিক বলেন, ‘রিকশা কিন্তু ঢাকার ঐতিহ্য। যদি বলা হয় রিকশাকে আমি আজকে শেষ করে ফেলব, সেটা কিন্তু বলার জন্য বলা। বাস্তবতা হলো, রিকশাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এই বাহনকে ঘিরে ঢাকার কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে অবৈধ রিকশাকে কিন্তু আমি কালকেই গিয়ে ভেঙে দিতে পারব না। এ ছাড়া বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য রিকশা একটি ভালো বাহন। ফলে এই লাইসেন্স দেওয়ার কারণে চালকরা লাভবান হবেন, সিটি করপোরেশন রাজস্ব পাবে এবং নগরবাসী একটি নিরাপদ রিকশা পাবে।’
এদিকে নতুন করে দুই লাখ রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে রাজধানীর যানজটে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, ‘এটা অবৈধ রিকশাগুলোকে রেগুলারাইজ করা। ফলে এতে নতুন করে যানজটে কোনো প্রভাব পড়বে না। ঢাকা নগরে রিকশার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। আমাদের এমন অনেক রাস্তা আছে, যেখানে রিকশা ছাড়া যাতায়াত করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের গণপরিবহনব্যবস্থা একটি সুশৃঙ্খল পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত রিকশা বাদ দেওয়া যাবে না।’ তবে প্রধান সড়কে না চলে এসব রিকশা ভেতরের সড়কগুলোতে চলা উচিত বলে মনে করেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।