এদিকে দ্বিতীয় দফায় গণনিবন্ধন শুরুর পরদিনই টিকা দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে এত দ্রত নিবন্ধনের পরপরই টিকা দিতে পারব এটি প্রত্যাশাই করতে পারেননি। টিকার মজুদ বাড়া এবং টিকা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশের সাতটি মেডিক্যাল হাসপাতালসহ ৬৭টি কেন্দ্রে টিকাকরণ কর্মসূচী চলছে। এর মধ্যে ঢাকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। আর জেলা সদরগুলোতে দেয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। ক্যোভাক্স থেকে আসা মডার্নার টিকাও দেশের সাতটি মহানগরে প্রদান করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফাইজারের টিকা নিতে এসে মাত্র দুই মিনিটেই টিকা পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শরিফা ইসলাম। তিনি বলেন, হাসপাতালের টিকাকরণ কর্মসূচী একেবারেই গোছানো ও ছিমছাম। স্বেচ্ছাসেবী টিমও আন্তরিকভাবে কাজ করছে। কোন ভোগান্তির চিহ্ন মাত্র নেই।
বিদ্যুত কুমার চৌধুরী (২০) নামের চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক বুধবার সকালে সদরের গ্লোরি কম্পিউটারে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্য নিবন্ধন করেছেন। বিদ্যুতের মতো অনেকেই নিজেদের পরিচিতদের যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি রয়েছে তারা টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ২৬ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার সরকার টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধের আগ পর্যন্ত ৭২ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিতে নিবন্ধন করেন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রথম দফায় অগ্রাধিকার তালিকা ছাড়া ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা শুধু নিবন্ধন করতে পেরেছিলেন। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের এর্ধগতির মধ্যে এবার সরকার টিকা দিতে সাধারণের বয়সসীমা ৩৫-এ নামিয়ে এনেছে। এর ফলে ৩৫ বছর বয়সের বেশি সবাই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
গত দুইমাস গণনিবন্ধন বন্ধ থাকলেও জুনে মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নিবন্ধন চালু করা হয়। কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার ও মর্ডানার এবং চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের প্রথম চালান এলে বুধবার দ্বিতীয় দফায় টিকা নিবন্ধন শুরু হয়। এর মধ্যে বিশেষ অগ্রাধিকার হিসেব বয়সসীমার শর্ত শিথিল করে বিদেশগামী কর্মীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্তুমোট ৮৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৭ জন নিবন্ধন করেছেন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৮ জন। এরমধ্যে তিনদিনে নিবন্ধন করেছে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ২০৯ জনের।
অধিদফতর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ ডোজ টিকাদানের মধ্যে প্রথম ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫৮ লাখ ২০ হাজার ২৩টি, ফাইজার-বায়োএনটেকের ৯ হাজার ৭৭৩টি এবং সিনোফার্মের ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭৬টি ডোজ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩২ জন।
এদিকে সংক্রমণের উর্ধগতির মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জনে। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৯২ জন মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে। জুন থেকে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন দেশে প্রাধান্য বিস্তার করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিসংখ্যানে বলেছে, দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় নতুন করে বাড়তে থাকা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে।
গত কয়েকদিন ধরে নতুন শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে টিকা নিতে আগ্রহ দেখা গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।