নিউজ ডেস্কঃ- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল মোতাবেক আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফলে চিত্র বদলাতে শুরু করেছে জোট কেন্দ্রীয় নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের রাজনীতি। ইতোমধ্যে বিজয়ী হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বর্তমান ২০ দলীয় জোট বহাল রেখেই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে নতুন আরেকটি জোটে শামিল হয়েছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন ফরম বিক্রির আগেই বিভিন্ন আসনে জামায়াতকে মনোনয়ন দেয়ার গুঞ্জনে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, ১২ নভেম্বর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি। এদিন বিএনপি’র তৃণমূলের বেশকিছু নেতা যৌথ নির্বাচন এবং জামায়াতের সঙ্গে সিট ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় বিতর্ক সত্ত্বেও জোটে এবং নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থানগত দিক নিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি স্বাভাবিকের তুলনায় বিগড়ে যায় বলেও জানা যায়।
পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে রংপুর-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান মাবু জানান, রংপুরে আমার জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও দল থেকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এখানে নাকি জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচন করবে। তাহলে আমাকে মনোনয়ন ফরম কিনতে বলার কোন মানে হয়? যদি জামায়াতের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হয় তবে রংপুর থেকে ঢাকা এসে আমার কী লাভ হলো? আমি এটা জানতে চাইলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পার্টি অফিসে রিজভী সাহেবের সামনেই আমার সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করে কিছু জুনিয়র কর্মী। তা দেখেও রিজভী সাহেব তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। এসময় বিএনপি’র হাইকমান্ডের ইঙ্গিতে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে সিলেট বিএনপির নেতা কাওছার জামান বাবলা জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, এটা ৯০ ভাগ নিশ্চিত হলেও তিনি সিলেট-৩ আসনে বিএনপির বিপক্ষে এবং নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। এরও একমাত্র কারণ জামায়াতের প্রার্থীকে অধিক গুরুত্ব দেয়া।
এদিকে রংপুর-৬ আসনের বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি নির্বাচনী প্রচারণা অনেক আগে থেকেই করে আসছেন। প্রচারণায় বেশকিছু অর্থও খরচ হয়েছে। পরে জানতে পেরেছেন রংপুর-৬ আসন জামায়াতের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই তিনি তার নির্বাচনী এলাকা পীরগঞ্জের ১০০’র বেশি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছিলেন। মূলত জামায়াতকে এই আসনটি ছেড়ে দেয়ার বিষয় নিয়েই দলীয় কার্যালয়ে তার বাকবিতণ্ডা হয়েছে এবং বিএনপি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচনে আসন ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। এতদিন জোটের শরিকদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি আসন বণ্টনের পরিকল্পনা থাকলেও এখন আরও উদার হয়ে উঠেছে বিএনপির হাইকমান্ড। সম্প্রসারিত জোট এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মিলিয়ে সর্বোচ্চ দেড় শ’ আসন পর্যন্ত ছাড়তে রাজি দলটি। ইতোমধ্যেই রংপুরের সবকটি আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিচ্ছে বিএনপি। এ আসনগুলোতে বিএনপি কোন প্রার্থী দেবে না বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।