আজ থেকে ১৫ বছর পূর্বে মাদক চোরাচালানসহ একাধিক নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগের কারণে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বর্তমানে বিজিবি) প্রেষণে দায়িত্ব পালনকারী লে. কর্নেল শহিদ উদ্দিন খানকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শহিদ উদ্দিন খান।
বাংলাদেশের শান্তি-সমৃদ্ধি বিনষ্ট করতে এই অপরাধী এখন ব্রিটেনে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। তার সঙ্গে ব্রিটেনে অবস্থান করছেন তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম, মেয়ে শেহতাজ মুরাসি খান ও পারিসা পিনাজ খান। অভিযোগ রয়েছে, শহিদ উদ্দিনের পরিবার বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে আরব আমিরাত ও ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, উভয় দেশই শহিদ উদ্দিনের পরিবারের বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস নিয়ে কোনদিনই কোন রকম প্রশ্ন তোলেনি। যদিও এই পরিবারটি একটা সময়ে ঢাকার অভিজাত এলাকা বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার ৭ নাম্বার রোডের ৪২৮ নং বাসায় আয়েশি জীবনযাপন করতেন। তৎকালীন সময়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে শহিদ উদ্দিন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ৪ জুন শহিদ উদ্দিনকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।
জানা গেছে, শহিদ উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে একটি ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের। যার সিআর নাম্বার হলো ৪৪৬৬/২০০৯। যেটি বাংলাদেশ অপরাধ বিধির ৪১৬, ৪৬৭, ৪৭১ এবং ১০৯ ধারার অন্তর্গত। এ রকম অন্তত ১২টি মামলার কার্যক্রম শহিদ উদ্দিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।
এরইমধ্যে শহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের আদালত। শহিদ উদ্দিন মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীর তালিকাভুক্তও রয়েছেন।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ব্রিটেনে শহিদ উদ্দিনের জুলিয়া নামের এক প্রেমিকা রয়েছে, যাকে তিনি পালক কন্যা হিসেবে দাবি করেন। তথ্যানুযায়ী, জুলিয়া তার পূর্বের স্বামীর সূত্র ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো কট্টরপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে বিশ্বাসী। এছাড়া আরেকটি সূত্রের বরাতে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক অস্ত্র পাচারকারী সংগঠনের মূল হোতা দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে অস্ত্র ব্যবসায় প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন শহিদ উদ্দিন খান। শহিদ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে আঁতাত করে ভারতে জাল টাকার বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত।
এছাড়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ভারত ও বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটানোর চক্রান্তে জড়িত রয়েছেন বলেও জানা গেছে। শহিদ ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বলে জানা গেছে। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের পেছনে অর্থলগ্নি করার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম- এর (সিটিটিসি) একটি বিশেষ দল রাজধানীর বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে অবৈধ অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বিভিন্ন দেশের অবৈধ মুদ্রা এবং জিহাদি সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। একইদিনে ক্যান্টনমেন্ট থানায় শহিদ উদ্দিন খানের নামে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া জানা গেছে, শহিদ উদ্দিন খান বিদেশের মাটিতে বসেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তবে শহিদ উদ্দিনের সম্ভাব্য সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।