নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন টনাপোড়েন পিছু ছাড়ছে না বিএনপির। তারই ধারাবাহিকতায় এবার জোট নিয়ে ত্রিমুখী চাপে পড়েছে দলটি। একদিকে ২০ দল থেকে শরিকদের বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা, ঐক্যফ্রন্ট থেকে শরিকদের বের হওয়ার আল্টিমেটাম এবং হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে দলীয় বিজয়ী নেতাদের শপথ গ্রহণ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনায় পর্যদুস্ত বিএনপি।
এমন বাস্তবতাকে রাজনৈতিক কৌশলে ভুল চালের ফল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা এটিকে বিএনপির পাদপ্রদীপ নিভে যাওয়ার লক্ষণ বলে মনে করছেন।
বিএনপির বিজয়ীদের শপথ নেওয়া এবং শপথ নিয়ে তাদের রাজনীতিটা পছন্দ করেননি নিজ দলেরই অনেক নেতা। এ ছাড়া তার দুই জোটের শরিকেরা শপথ নেওয়ায় বেশ সমালোচনা করছেন। শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই শপথের সিদ্ধান্ত নেয়ায় শরিক দলগুলো বিএনপিকে ছেড়ে যাচ্ছে। শরিক দলগুলো বলছে, শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তারা বলছেন, গোপনে আঁতাতের ফসল হিসেবে শপথে সম্মত হয়েছে বিএনপি।
এদিকে ২০ দলীয় জোট ছাড়তে যখন শরিক দলগুলো সোচ্চার হয়ে উঠেছে তখন বিএনপির আরেক জোটেও শুরু হয়েছে ভাঙন। যা বিএনপিকে নতুন বিপাকের সম্মুখীন করেছে। ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে যেসব অসংগতি আছে, তা নিরসন করা না হলে ৮ জুন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।
এ বিষয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপি মূলত জোট নির্ভর একটি দল। বিএনপি নিজেকে যতই শক্তিশালী ভাবুক না কেনো, জোট ছাড়া তাদের আসলে বিশেষ কোনো মূল্য নেই। এর সত্যতা তারা নিজেরাই দেখিয়েছে। জামায়াত ছাড়ার জন্য বিএনপিকে যখন আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছিলো তখন তারা কিছুতেই জামায়াতকে ছাড়তে রাজি হয়নি। এখনও তারা তাদের সিদ্ধান্ত অটুট। ফলে জামায়াত বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনভাবে শরিক দলগুলোর মধ্যে এরকম বেশকিছু দল আছে যারা বিএনপিকে মাঠে সক্রিয় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তারা জোট থেকে বের হয়ে গেলে তা মোটেই বিএনপির জন্য সুখের হবে না। শুধু ২০ দলীয় জোট নয়, ঐক্যফ্রন্টেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এদিকে শরিকসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। এ নিয়ে নিজের দলের নেতাদেরও অস্বস্তির সীমা নেই। সবকিছু বিবেচনায় যা মনে হচ্ছে তা হলো, এই সমস্যা উত্তরণ থেকে বিএনপির পা যদি কোনোভাবে পিছলে যায় তবে দলটির পাদপ্রদীপ চিরদিনের জন্য নিভে যাবে।