সারা দেশে বিভিন্ন রকম গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল। গুজবের প্রভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ। ছেলে ধরার মতো গুজবে কান দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে অনেককেই। অনেকে অজান্তেই জড়িয়ে পড়ছেন ফৌজদারি অপরাধে। ফলে জেল-জরিমানা এড়াতে সকলের সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধীকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। আর এর ব্যতিক্রম করলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী, দায়ী ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে না দিয়ে কাউকে আটকে রাখে, তবে দায়ী ব্যক্তিকে দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। পাশাপাশি জরিমানারও বিধান রয়েছে।
অন্যদিকে আটক রাখার পর যদি ওই ব্যক্তিকে পিটুনি বা ধোলাই দেয়া হয় তবে কারাদণ্ডের মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। আঘাত করতে গিয়ে যদি আটককৃত ব্যক্তি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন তবে ৩৩৪ ধারা দণ্ডবিধি অনুযায়ী, কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে আরও এক বছর। সঙ্গে অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
এদিকে আইন অনুযায়ী, হামলার শিকার ব্যক্তির মৃত্যু হলে, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তির দশ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যার বিষয়টি প্রমাণ হয় তবে দণ্ড হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদণ্ড। পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
গণপিটুনিতে যদি ওই ব্যক্তি নিহত হয় তবে তার দায় বর্তাবে অপরাধ সংঘটনকারী সব ব্যক্তির ওপর। কেননা আইনে ‘যৌথ দায়িত্বশীলতা’ বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন- যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন। তাই গণপিটুনিতে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, সবাইকে সমভাবে এজন্য দায়ী করা যাবে।
তাই গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে নিরপরাধ মানুষকে ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনি দেয়া বা হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে গণধোলাই দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। পাশাপাশি গুজব সংক্রান্ত যে কোন ব্যাপারে আইন হাতে তুলে না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার জন্যও জনসাধারণকে অনুরোধ করেছে সরকার।