১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে জন্ম হয়েছিল আওয়ামী লীগ নামের প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির। এই দলের জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালীর হাজারও বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস। জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন নিয়েই এই দলটি বিকশিত হয়।
যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির ভূ-খন্ডের সীমানা পেরিয়ে এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং জনসমর্থনপুষ্ট অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানব কল্যাণকামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বাঙালীর ঐহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন সর্বশেষ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তার আদর্শ এবং উদ্দেশে অটল থেকেও সময়ের বিবর্তনে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীর মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আজ প্রতিষ্ঠিত।
রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বাঙালী জাতির সকল মহতী অর্জনের নেতৃত্বে ছিল জনগণের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, যার মহানায়ক ছিলেন রাজনীতির মহামানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে। জন্মলাভের পর ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে টানা তৃতীয়বারের মতো তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রায় সোয়া ১০ বছর পার করেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছেন মহামূল্যবান স্বাধীনতা। তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি পিতার মতোই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছেন গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের সমপরিমাণ আরেকটি বাংলাদেশ। টানা দুদফায় ক্ষমতায় থেকে জাতিকে উপহার দিয়েছেন উন্নয়ন-অগ্রগতি ও ডিজিটালাইজড নতুন প্রজন্মের উপযুক্ত বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৬২ বছর পর ছিটমহলবাসীকে দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বাদ। স্থল-সমুদ্র বিজয়ের পর সর্বশেষ মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ নিক্ষেপের মাধ্যমে মহাকাশও জয় করেছে আওয়ামী লীগ।\
আওয়ামী লীগের জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয়দফা, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালী জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগ বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। এটা বাঙালী জাতির গৌরবের যে দ্বিজাতিতত্ত্বেও চোরাবালি থেকে বাঙালী জাতিকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মতো একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যিনি হাজার বছরের বাঙালী জাতির সাধনা, ধ্যান, জ্ঞান তার বিপুল সংস্কৃতির ভাণ্ডারের অন্তর্গত সত্যকে নিজের জীবনে ধারণ করে তা রূপ দিয়েছিলেন দীর্ঘ দুশ’ বছরের ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণে জাতীয়তাবাদের বিকৃতি থেকে আমাদের মুক্ত করে। আগামী দু’এক শতাব্দীর মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো একজন মহামানব, যুগ সৃষ্টিকারী কোন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে তা কল্পনাও করা যায় না। তাই বাঙালী জাতি আওয়ামী লীগের শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকেও।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.