গণটিকা কর্মসূচী সফল করতে রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। আগামী সপ্তাহে শুরু গণটিকা কর্মসূচীতে সাত দিনে মোট ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। অধিক মৃত্যুঝুঁকি কমাতে বয়স্কদের টিকাদানে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রসূতি ও গর্ভবতীদেরও টিকা দেয়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে নিবন্ধন ছাড়াই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকা দিতে পারবে। এছাড়া কর্মসূচীর পরিধি বাড়াতে হাসপাতালের বাইরে টিকা কেন্দ্রে আনার চেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডেল্টা ধরনে দেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। কঠোর বিধিনিষেধেও কমছে না সংক্রমণ। করোনা প্রতিরোধে এখন থেকে ব্যাপক হারে টিকাকরণ কর্মসূচীতে যাচ্ছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার মাধ্যমেই করোনাকে পরাস্ত করার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। ওয়ার্ড-ইউনিয়নে ৫ থেকে ৭টা কেন্দ্র করে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করতে তাদের কাছেই সেবা পৌঁছে দেয়া হবে। টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করতে ১১ আগস্টের পর টিকা দেয়া ছাড়া চলাচলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে পঞ্চাশোর্ধ নারী ও পুরুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তাদের ৭৫ শতাংশ পঞ্চাশোর্ধ এবং তাদের ৯০ শতাংশ টিকা নেননি। তাদের মধ্যে মৃত্যুহারও বেশি। এ কারণে পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা পঞ্চাশোর্ধ তারা যেন তাড়াতাড়ি ইউনিয়ন পর্যায়ে এসে টিকা নিতে পারেন, সরকার সেদিকে জোর দিচ্ছে। টিকা আরও বেশি যখন হাতে আসবে তখন সরকার তুলনামূলক কমবয়সীদেরও টিকা দিতে পারবে। ওয়ার্ড পর্যায়েও বয়স্কদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
ব্যাপক হারে টিকা দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ না হওয়ায় ব্যাপক হারে টিকা দেয়ায় দেরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজ-কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক আর ঢাকার ভেতরে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় টিকা কেন্দ্র করতে চাই।
তিনি বলেন, কলেজের জায়গা বড়, শিক্ষার্থীরাও নেই, সেখানে মাল্টিপল বুথ করে টিকা দিতে চাই। আর গ্রামাঞ্চলে টিকাদানের বিষয়ে ইতোমধ্যে মাইক্রো প্ল্যান হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই ৭ আগস্ট থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, দেশে করোনার টিকাদান কেন্দ্র অচিরেই আরও বাড়বে। সিটি কর্পোরেশন এবং গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি হাসপাতাল থেকে টিকা কেন্দ্র বের করে আনতে। হাসপাতালগুলোয় টিকাদান কেন্দ্র করার কারণ ছিল টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা, যার জন্য ইমিডিয়েট হাসপাতাল সাপোর্ট লাগবে।
ব্যাপক হারে শুরু হওয়া টিকাকরণ কর্মসূচীতে দেশে মোট ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেয়া হবে। এই কর্মসূচীতে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বৃদ্ধ লোকদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি হওয়ার সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ভাসমান শ্রমিক, বাসের হেলপারসহ সবাইকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। এমনকি বলা হয়েছে, টিকা দেয়া ছাড়া ১১ তারিখের পর থেকে কেউ কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। বাড়ির বাইরে বেরোতে গেলে টিকার সনদ দেখাতে হবে। অথবা টিকা কার্ড দেখানো লাগবে চলাচল করতে থাকলে। কেউ টিকার সনদ বা কার্ড দেখালেই ওয়েবসাইটে গিয়ে তা পরীক্ষার সুযোগ থাকবে বলেও সরকার থেকে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে প্রচার আকারে টিকার কার্যক্রম পরিচলনার মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী ৭ থেকে ১২ আগস্ট এই কার্যক্রম চলবে। এই কর্মসূচীতে শহর ও গ্রামাঞ্চলে একযোগে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। শহরাঞ্চলে মডার্না ও গ্রামাঞ্চলে সিনোফার্ম টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য দেশের ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৫৫ লাখ মডার্না ও ৫১ লাখ সিনোফার্ম টিকা মজুদ রয়েছে। ক্যাম্পেনে এক কোটি টিকা প্রথম ডোজ হিসেবে এবং অবশিষ্ট দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া চলমান কেন্দ্রগুলো আগের মতো চলমান থাকবে এবং শুধু দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। বস্তি ও কারখানাগুলোতে টিকা কার্যক্রম ও প্রচার পাশাপাশি চলমান থাকবে।
ছয় দিনব্যাপী পরিচালিত এই টিকাদান কর্মসূচীতে সারাদেশে ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে এক কোটি ৩৪ লাখ ৪২ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হবে। এর মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলের ১৩ হাজার ৮০০ ওয়ার্ডে এক কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার ডোজ, সিটি কর্পোরেশনগুলোর ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ ডোজ এবং পৌরসভাগুলোয় এক হাজার ৫৪ ওয়ার্ডে আট লাখ ৪৩ হাজার ২০০ ডোজ টিকা দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রতি ওয়ার্ডে একটি স্থায়ী ও দুটি অস্থায়ী কেন্দ্র সপ্তাহে ছয় দিন কোভিড টিকা দেয়া হবে। উপজেলা ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে টিকাদান টিম থাকবে, যেখানে সপ্তাহে চার দিন কোভিড টিকা দেয়া হবে।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, টিকাদান কর্মসূচী চলাকালে অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণ করবেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ওয়ার্ড প্রতি টিকা টিম ও ভ্যাক্সিনেশন নির্ধারণ করবেন। এ ক্ষেত্রে এনজিও, সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালসহ অন্য সেক্টর সহায়তা দেবে।
সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল/এ্যাপসে সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও গ্রামের ওয়ার্ডভিত্তিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যমান সাব-ব্লক অনুযায়ী টিকাদান পরিচালিত হবে। প্রথম ডোজের নিবন্ধন যারা করেছেন তারা কর্মসূচীতে টিকা নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে করোনা টিকা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হাসপাতালভিত্তিক টিকাদান পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। দেশব্যাপী আরও দ্রুত টিকাদানের মাধ্যমে ইপিআই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। এজন্য ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কোভিড টিকা ব্যবস্থাপনায় ইতিপূর্বে সম্পৃক্ত না থাকায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা কঠিন। তাছাড়া বর্তমানে সরকারের তিন ধরনের টিকা রয়েছে। তিনটি টিকার ব্যবহারবিধিও আলাদা। তাই দেশব্যাপী ইপিআই কর্মীদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, চলমান টিকাদান প্রক্রিয়ায় ১০০৫টা বুথে ৩ লাখ ৭ হাজার ডোজ টিকা দেয়ার সক্ষমতা আছে। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মতো টিকা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে এক কোটি টিকাদান সম্ভব কিনা, সেটিও ভাবার বিষয়। কারণ দেশের মানুষকে সচেতন করতে না পারলে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত দেশের মোট ৪ দশমিক ১৬ ভাগ মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগের ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬ জন। ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫০ হাজার ২২৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১৪৬৪ জন। সিনোফার্মের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১০৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬ জন। এছাড়া মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮১ জন, তবে এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ এখনও দেয়া শুরু হয়নি।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.