করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও থেমে নেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাংলাদেশের প্রথম টানেল তৈরির কাজ। করোনা মহামারীর মধ্যেই নির্মাণসামগ্রী সরবরাহে বিঘ্ন, শ্রমিক সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উপযোগী করা নিয়ে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে মেগা এ প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।
তাতে আশা জাগছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ টানেলকে যান চলাচলের উপযোগী করার।
কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী আসছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউ ছুটিতে গেলে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইন পালন করার কারণে এক মাসের আগে কাজে যোগদান করতে পারে না। সব মিলিয়ে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। তবে প্রচেষ্টা রয়েছে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করার। এরই মধ্যে কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।
’ তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টানেলকে যান চলাচলের উপযোগী করার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। ’
জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ কার্যক্রমে বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক সংকটও দেখা দিয়েছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও এগিয়ে চলছে টানেল তৈরির কাজ। নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টানেলের খননকাজ চলছে স্বাভাবিক গতিতে। এরই মধ্যে ২৪৫০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় টানেলটির খনন হয়েছে ১৯৭০ মিটার। এর আগে খনন শেষ হওয়া প্রথম টানেলেও সড়ক তৈরির কাজ চলছে অভিন্ন গতিতে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় টানেলে যান চলাচলের উপযোগী হয়েছে ১১৫০ মিটার। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ফ্লাড গেটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। টানেলের দুই প্রান্তে সংযুক্ত দুটি রাস্তা নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে।
আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে স্প্যান ও গার্ডার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের সংযোগ সড়ক থেকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে গাছ কাটা ও মাটি ভরাট শুরু হয়েছে।
চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হচ্ছে টানেল। মেগা এ প্রকল্পের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগর, বিমান ও সমুদ্রবন্দর।
অন্য প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। বিভক্ত দুই অংশকে সাংহাইয়ের আদলে একই সুতোয় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্প-কারখানা ও পর্যটনশিল্পের।