কোভিড সঙ্কটে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে যে ব্যবধান, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের স্বল্প আয়ের যে দেশগুলোকে প্রায়ই ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, সেসব দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে উত্তর গোলার্ধের ধনী দেশগুলোর ‘ব্যর্থতার’ বিষয়টি তুলে ধরে আন্তর্জাতিকভাবে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সকালে প্যারিস পিস ফোরামে সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন বিশ্বায়নের এক অসম প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। কোভিড-১৯ মহামারীতে আমরা দেখেছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্লোবাল সাউথের কোটি কোটি মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিতে ব্যর্থ করেছে। টিকা আর চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশাল ব্যবধান তেমনই দুটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত টিকাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য দূর করা।
স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে উত্তরের ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের আওতায় নেয়া প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল পরিমাণে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের মতো কিছু উন্নয়নশীল দেশের রয়েছে। সেসব দেশকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি দেওয়া হলে টিকাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য দূর করতে এসব দেশ ভূমিকা রাখতে পারে। গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ নিজেদের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে এরইমধ্যে নিজেদের উপযোগী কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে তার সুফল ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোতে সাড়া দিতে সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের ধারণাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অথচ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের ধারণা পেছনের সারিতেই রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য প্রথাগত যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে পরিবর্তন আনা সহজ নয়। আর সে কারণেই সাউথ-সাউথ সহযোগিতার অনেক সম্ভাবনাময় প্রকল্প প্রয়োজনীয় তহবিল পায় না। ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপরারেশন বা ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ধারণাটি যতটা সম্ভাবনা রাখে, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এই ধারণা অনুযায়ী, ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশনের ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ থাকবে, যার দুটি হবে স্বল্প আয়ের দেশ, অন্যটি উত্তরের ধনী দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক উন্নয়নে সহযোগিতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেক উন্নত দেশই পিছিয়ে আছে। সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশনের উদ্যোগে সহায়তা দেয়া তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি উপায় হতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সক্রিয় ভূমিকার কথা এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় দর কষাকষি করে যাওয়ার কথাও বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সামগ্রী নিয়ে বন্ধুপ্রতীম বেশ কিছু দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। একটি দেশে টিকা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীকে পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু বছর ধরে আমরা অন্য দেশের সাথে আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করে আসছি। কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনের সুফল বিশ্বের অন্যান্য অংশেও পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের উদ্যোগের অধীনে ভ্রাতৃপ্রতীম আফগান জনগণের জন্য গত বিশ বছরে মানবিক সহায়তা দিয়ে আসার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে আসার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
তিনি বলেন, ইউএনডিপির সহায়তায় কমিউনিটি পর্যায়ে ডিজিটাল পরিষেবা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অভিজ্ঞতা স্বল্প আয়ের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময় করছে বাংলাদেশ। জলবায়ু সঙ্কটে বাংলাদেশের নেয়া কিছু অভিযোজন কৌশল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজর কেড়েছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ একটি ‘সাউথ-সাউথ নলেজ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার’ স্থাপনের প্রস্তাব রাখে, যা উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সমাধানসহ সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। সে বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ, জি টোয়েন্টি এবং ওইসিডিকে এ ধরনের প্রস্তাবে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই। আর এই ‘মুজিব বর্ষ’ থেকে, আমাদের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন থেকেই তার সূচনা হবে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.